ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কারাবরণে উন্মুখ ছিলেন ডা.শাহাদাত

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
কারাবরণে উন্মুখ ছিলেন ডা.শাহাদাত কারাবরণে উন্মুখ ছিলেন ডা.শাহাদাত

চট্টগ্রাম: ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে নেতা-কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। রাস্তায় নেমে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে রায় দিলে সরকার পতন আন্দোলন শুরু হবে।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে এসব হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল নগর বিএনপি নেতারা। কেউ না থাকলেও নগর ছাত্রদল সরকার পতন আন্দোলন শুরু করবে এমন ঘোষণাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তবতা হলো খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে।

দলের চেয়ারপারসনের রায়ের প্রতিবাদে কোন মিছিল সমাবেশ করতে পারেনি নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। রাস্তায় দাঁড়ানোর সাহসও করেনি। ফলে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, রায়ের আগে বিএনপি নেতাদের তর্জন-গর্জনই সার। বাস্তবে দলের প্রতি কারও দায়বদ্ধতা নেই।

২৮০ জনের নগর বিএনপির কমিটি হলেও নাসিমন ভবনের সামনে ২০ জনও আসেনি। খোদ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করই আসেনি। আন্দোলন-সংগ্রামের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করা ছাত্রদলকে দেখা যায়নি কোথাও। এসব কারণে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

তারা বলছেন, কেবল পদ-পদবি পাওয়ার জন্যই সবাই লড়াই করে। দলের জন্য কারও দরদ নেই। রায় ঘোষণার আগে নানা হুংকার দিলেও প্রকৃত অর্থে তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়নি। কেবল বলার জন্যই বলেছে।

‘সকাল থেকেই গ্রেফতার হতে চাইছেন শাহাদাত’:

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে যান নগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাত হোসেন। সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল আলম, নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি। তারা নাসিমন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় আরও বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সেখানে যোগ দেন।

দুপুর দেড়টায় একজন পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়ে মারলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করলে ডা.শাহাদাত হোসেনকে আটকের জন্য নিয়ে যায়। পরে তাকে নাসিমন ভবনের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। আবারও পুশিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়লে লাঠি চার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করে। এতে সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান ও যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল আলমও আহত হন।

আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শাহাদাত হোসেনকে

এদিকে শাহাদাতের গ্রেফতার নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রায় ঘোষণার আগেই কেন তিনি গ্রেফতার হলেন সেই প্রশ্ন সামনে এনেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, আন্দোলনের কোন রূপ রেখাই দিতে পারেনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম নাসিমন ভবনে আসেননি। সিনিয়র নেতারা না আসায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েও রাস্তায় নামনে পারেনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগর পুলিশের দু’জন সিনিয়র কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনকে চারবার নাসিমন ভবনের সামনে থেকে সরে যেতে বলেন। কিন্তু তিনি সরেননি। পরে তার একান্ত সহকারী মারুফুল ইসলামের কাছে ম্যাসেজ পাঠান। যাতে তিনি সরে যান। এতেও শাহাদাত সরেননি। পরে শাহাদাতকে আটকের নির্দেশ আসে পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এরপর তাকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।

জানতে চাইলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,‘তিনি তো সকাল থেকেই গ্রেফতার হতে চাইছেন। ’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদাভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মীরা কাজ করেনি। ফলে রাস্তায় নামতে পারেনি। ব্যর্থ প্রমাণিত হতে পারেন সেই আশঙ্কা থেকেই মূলত রায়ের আগেই আটক হয়ে যান শাহাদাত। অন্যদিকে রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে রাস্তায় নামতে পারেনি সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।

জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান শামীম বাংলানিউজকে বলেন, কয়েজ হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের কঠোর অবস্থান এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের তাণ্ডবের কারণে বের হতে পারেনি। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছিলাম।

রাতে থানায় থাকছেন শাহাদাত:

বৃহস্পতিবার রাতে কোতেয়ালী থানাতেই থাকছেন ডা.শাহাদাত হোসেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শুক্রবার তাকে কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম।

রাজপথ ছেড়ে ফেসবুকে সরব:

দলের চেয়ারপারসনের রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় না নামলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব দেখা গেছে অধিকাংশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের। এছাড়া অনেক সমর্থক তাদের নেতার ছবি দিয়ে আহত হওয়ার খবর দিচ্ছেন। অথচ তারা আহত হননি। আবার অনেকেই ডা.শাহাদাতের মুক্তি দাবি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। কেউ কেউ পত্রিকায় বিবৃতিও পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে নেতাদের রাস্তায় না দেখে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।  

মাসুম খান নামে একজন লিখেছেন,‘কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি আজ কোথায়, সারাদিন উনার ছায়া কেউ দেখলো না! আমরা লজ্জিত। এদিকে মাঠে দেখা না গেলেও শাহাদাত হোসেনকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৬ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮
এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।