এছাড়া চলতি বছর থেকে বলিখেলা আয়োজনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলিখেলার আয়োজকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
জানতে চাইলে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বাংলানিউজকে বলেন, মূল বিষয় ছিল বলিখেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতা। কিন্তু ১১০ বছর পার করে এখন আমরা কি দেখছি ? বলিখেলা বা কুস্তির প্র্যাকটিস সেভাবে হচ্ছে না।
‘ইউনেস্কোতে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাবার জন্য আবেদন করা হবে। এছাড়া আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। আব্দুর জব্বারের উত্তরাধিকার এবং আয়োজক কমিটির সভাপতিকে মন্ত্রণালয়ে আসতে বলেছি। উনাদের সঙ্গে কথা বলে করণীয় ঠিক করব। ’ বলেন মন্ত্রী
বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলিখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, ব্যতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য বৃটিশ সরকার আবদুল জব্বারকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তবে তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করেন।
বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও তৎকালীন বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও বলী কিংবা কুস্তিগিররা এসে এই খেলায় অংশ নিতেন।
সূচনার ধারাবাহিকতায় এখনও প্রতিবছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলিখেলা। আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে মেলা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী পদাধিকারবলে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি।
তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে যোগ দিতে চট্টগ্রামে শিল্পকলা একাডেমিতে আসেন। আলম খোরশেদ, দেওয়ান মাকসুদসহ কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মীর কাছে মন্ত্রী জব্বারের বলিখেলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
এসময় দেওয়ান মাকসুদ কমিটির সভাপতি জহরলার হাজারীকে সার্কিট হাউজে ডেকে নিয়ে যান।
‘মন্ত্রী মহোদয় আমার কাছে বলিখেলা ও মেলার সার্বিক বিষয় জানতে চেয়েছেন। বলিখেলাকে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ করার বিষয়ে উনার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এই বিষয়ে আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যা যা তথ্যউপাত্ত লাগে সব আমরা সরবরাহ করবো বলে মন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছি। ’ বলেন জহরলাল হাজারী
মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বাংলানিউজকে বলেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায়টা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বাংলা একাডেমি এবং জাতীয় জাদুঘরের সমন্বয়ে একটা টিম করতে হবে। তারা পেপার ওয়ার্ক করবে, ইতিহাস সংগ্রহ করবে, গবেষণা করবে। তারপর ইউনেস্কোর নির্ধারিত যে ফরম আছে, সেটা পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
‘সব মিলিয়ে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায়ে সময় লাগবে। আগে যেগুলোর স্বীকৃতি পেয়েছি সেগুলো একই প্রক্রিয়ায় পেয়েছি। এটাও একই প্রক্রিয়াতেই হবে। তবে সবই এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা আগে এই বলিখেলার সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হওয়া যায় সেটা দেখছি। ’ বলেন মন্ত্রী
জানতে চাইলে আব্দুল জব্বারের উত্তরাধিকার ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই খুশির খবর। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে স্বাগতম জানাচ্ছি। আমরা কমিটির সবাই বসে এই বিষয়ে আমাদের যেটা কর্তব্য সেটা ঠিক করব।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণকে সর্বশেষ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। গত বছরের ৩১ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকৃতির বিষয়টি প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
আরডিজি/টিসি