শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমান পাঁচ আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে পাঁচ কিশোর জানিয়েছেন, আদনানের সঙ্গে তাদের কোন বিরোধ ছিল না।
এছাড়া জবানবন্দিতে পাঁচ কিশোরই ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছেন।
পাঁচ কিশোরের একজন সাব্বির খানের হাতে হত্যাকাণ্ডের সময় পিস্তল দেখা গেছে ভিডিও ফুটেজে। সাব্বির জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সেই পিস্তল এনাম তাকে দিয়েছেন।
সাব্বিরের জবানিতে আসা এই এনাম হোসেন সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নে। স্থানীয়ভাবে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফের অনুসারী। নিজেকে মহসিন কলেজে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন এনাম।
আদনানকে হত্যার পর ছাত্রলীগ নেতার বাসায় আশ্রয় নেয় খুনিরা
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। বাকি যাদের নাম এসেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ভিডিও ফুটেজে যেভাবে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখা গেছে সেভাবেই জবানবন্দিতে বর্ণনা এসেছে। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালত পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
জবানবন্দি দেওয়া পাঁচ কিশোর হলেন, নগরীর চান্দগাঁওয়ের হাজেরা তজু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মঈন খাঁন, সাব্বির খান ও মুনতাছির মোস্তফা, চকবাজার ডিসি রোডের হলি ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী এখলাছ উদ্দীন আরমান এবং ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করা আবদুল্লাহ আল সাঈদ। তাদের সবার বয়স ১৮ বছর বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং গ্রেফতার পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এডিসি রউফ জানিয়েছিলেন, সপ্তাহখানেক আগে মহসিন কলেজের মাঠে খেলা নিয়ে খুন হওয়া আদনান ইসফার ও তার বন্ধুদের সঙ্গে জামালখানের আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়।
ঘটনার দিন ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রকে জামালখান মোড়ে দেখে ধাওয়া দেন আদনান ও তার কয়েকজন বন্ধু। আইডিয়াল স্কুলের ওই দুই ছাত্রও রউফ গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী।
মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির এবং আরও তিনজন রাজনৈতিক বড় ভাই তখন গণি বেকারির মোড়ে কাজেম আলী মাষ্টার স্কুলসংলগ্ন মার্কেটে একটি দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ধাওয়া খেয়ে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্র তখন দৌঁড়ে ওই হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আড্ডারত বড় ভাইদের সাহায্য চান তারা।
তখন মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির হোটেল থেকে বেরিয়ে আদনানদের পাল্টা ধাওয়া দেন। তখন আদনানকে ফেলে তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। সাব্বির এসে আদনানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আদনান ও সাঈদ লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।
আদনান দৌঁড়ে পালানোর সময় জামালখানে খাজা আজমির ওয়ার্কশপের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যান। উঠে আবারও দৌঁড়ে পালানোর সময় মুনতাছির পেছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরলে পেছনের অংশ ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। তখন মঈন সামনে থেকে এসে আদনানের পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে। এরপর চারজন পেছনদিকে গণি বেকারির দিকে চলে যায়।
আদনান জামালখান মোড়ে খাস্তগীর স্কুলের দিকে দৌঁড়ে যাবার সময় বারবার পেছন ফিরে রক্ত দেখছিল। কিন্তু একপর্যায়ে সে লুটিয়ে পড়ে। তবে মঈন তার পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে খাস্তগীর স্কুলের কাছাকাছি পর্যন্ত যান। পরে আবার পেছন ফিরে গণি বেকারির দিকে চলে যান।
গত ১৬ জানুয়ারি নির্মম খুনের শিকার আদনান ছিলেন কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা এলজিইডিতে কর্মরত প্রকৌশলী। নগরীর জামালখানে প্রেসক্লাব ভবনের পেছনে তাদের বাসা।
আদনান খুনে ৫ ছাত্র আটক, ছোরা উদ্ধার
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
আরডিজি/টিসি