ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নি:সন্তান দম্পতির পূজায় শরিক প্রণবকন্যা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
নি:সন্তান দম্পতির পূজায় শরিক প্রণবকন্যা ছবি: মো.সরওয়ারুল আলম (সোহেল), বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: অগ্নিযুগের বিপ্লবী সূর্যসেনের জন্মভিটায় যখন যাচ্ছিলেন প্রণব মুখার্জি, তখন তাঁকে একনজর দেখার আশায় রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ভিড়।  নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কাছে আসতে পারছিলেন না, কিন্তু দূর থেকে দেখেই মানুষ হাত জোড় করেছিলেন শ্রদ্ধায়-সম্মানে।  ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতির পা পড়েছে রাউজানের নোয়াপাড়ার মতো একটি গাঁয়ে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। 

সাধারণ মানুষের হৃদয়ের এই আকুলতা উপেক্ষা করতে পারেননি প্রণবকন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি।   নিরাপত্তার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে ছুটে যান মানুষের মাঝে।

সাধারণ মানুষও হৃদয় দিয়ে বরণে কমতি রাখেননি।   কেউ একটু ছুঁয়ে দেখেছেন, কেউ বা হাতজোড় করে আদাব-নমস্কার দেন, আর কেউ টেনে নিয়ে যান নিজের ঘরের আঙিনায়।

তেমনি একজন সুনীল দাশের স্ত্রী বেবি দাশ।   সুনীলের ছেলের সংসারে সন্তান কামনায় পূজা চলছিল।   বেবি শর্মিষ্ঠাকে টেনে নিয়ে যান সেই আনুষ্ঠানিকতায়।   নিজের ভাষায় বলেন, ‘অ-নে ত রাজার মাইয়া।   অনে আর্শীবাদ গইরল্যে আঁর পুতে পোয়ার মুখ দেখিবু। ’ (আপনি তো রাজার মেয়ে।   আপনি আর্শীবাদ করলে আমার ছেলে সন্তানের মুখ দেখবে। )

সুনীল দাশের বাড়ির আঙিনায় পাতা চেয়ারে বসেন শর্মিষ্ঠা।   হেসে বলেন, আমি চাইলে কিছু হবে কি না জানি না।   তবে আমি প্রার্থনা করি, যেন একজন সন্তান আসে। ছবি:বাংলানিউজ

প্রণব মুখার্জিকে দেখতে আসা নোয়াপাড়ার সূর্যসেন পল্লীর সাধারণ মানুষগুলোর মাঝে একটি কিশোরকে খুঁজে নেন শর্মিষ্ঠা।   ‍জানতে চান, নাম এবং লেখাপড়ার কথা।   কিশোর জানায়, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে।  

শর্মিষ্ঠা বলেন, পড়ালেখা কর তো ? নাকি শুধু খেলাধূলা করে বেড়াও।

হাতজোড় করে কেউ নমস্কার, আবার কেউ সালাম দিয়ে বলেন, ‘আপনি আমাদের গ্রামে এসেছেন।   আমাদের খুব ভালো লাগছে। ’

মধ্যবয়সী এক নারীর কাছে শর্মিষ্ঠা জানতে চান, ‘এই গ্রামে কত ঘর আছে ? আপনারা এখানে কতদিন ধরে আছেন ?’

ওই নারী নিজের ভাষায় বলেন, ‘পাকিস্তান আমলততুন আঁরা এন্ডে আছি। ’

হেসে শর্মিষ্ঠা বলেন, চট্টগ্রামের ভাষা তো দেখি বোঝা যায়।   আমি ভেবেছিলাম অনেক কঠিন ভাষা।

প্রায় ১৫ মিনিটের মতো সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রণবকন্যা চলে যান সূর্যসেনের ভিটায়।   এর ফাঁকে বাংলানিউজের কথা হয় শর্মিষ্ঠার সঙ্গে।  

কেমন দেখলেন চট্টগ্রাম, প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খুব ভালো।   আমার খুব, খুব ভালো লাগছে। ’

পরের প্রশ্নে যাবার আগেই হাতজোড় করে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সেখানকার বাসিন্দা শফিউল আলম শফি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ইন্ডিয়ার একজন প্রেসিডেন্ট এসেছেন।   এটা কি কম আনন্দের কথা ! আমরা খুব খুশি। ’

ভারতের ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলায়।   ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি যখন বাংলাদেশ সফর করছিলেন তখন নড়াইলে গিয়েছিলেন।

১৪ জানুয়ারি বিকেলে ঢাকায় পৌঁছান প্রণব মুখার্জি।  

মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে এসে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-লিট ডিগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন।   এরপর অগ্নিযুগের বিপ্লবী সূর্যসেনের স্মৃতি দেখতে রাউজানে যান।  

বুধবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে প্রণব মুখার্জির চট্টগ্রাম ছাড়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।