ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘ভারত-বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা চট্টগ্রামের’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
‘ভারত-বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা চট্টগ্রামের’ ছবি: মো.সরওয়ারুল আলম (সোহেল), বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: অখণ্ড ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। একইসঙ্গে ভৌগলিকতার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে মানুষে-মানুষে বিশ্বজনীন সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রণব মুখার্জি বলেন, চট্টগ্রাম না দেখলে বাংলাদেশে আসা সম্পূর্ণ হয় না।  তার অন্যতম কারণ এটি এইদেশের একটি প্রধান বন্দর, শুধু তা-ই নয়।

 অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল।  একটি বিপুল ভূমিকা ছিল।
তেমনি বাংলাদেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রেও চট্টগ্রামের ভূমিকা কোনঅংশেই কম নয়।

‘চট্টগ্রামের ভূমিকা এই কারণে বলছি, পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার স্টেশন থেকে।  শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা তার গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তেই সেটা পৃথিবীর মানুষের নজরে এনেছিলেন সেই বেতারকেন্দ্রের কর্মীরা। ’

নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে এই সুধী সমাবেশের আয়োজন করে ভারতের সহকারী হাই কমিশনারের কার্যালয়।   এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিশিষ্ট নাগরিকরা যোগ দেন।

রাষ্ট্র ভিন্ন হলেও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের উপর গুরুত্বারোপ করে ভারতের ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেন, এই উপমহাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্তরে-প্রশাসনিক স্তরে আলাপ-আলোচনা তো হবেই।  কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক।   এই সম্পর্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দুটি বা তিনটি বা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

‘তাই আপনাদের সকলের কাছে আমার এই আবেদন থাকবে, আমরা সকলেই নিশ্চয় এক-একটি রাষ্ট্রের অধিবাসী।  আমরা সকলেই এক-একটি ভাষায় কথা বলি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আরেকটা বৃহত্তর পরিচয় হচ্ছে আমরা মানুষ। ’

এসময় কবির সেই অমোঘ বাণীও শোনান প্রণব মুখার্জি, ‘শোন হে মানুষ ভাই/ সবার উপরে মানুষ সত্য/ তাহার উপরে নাই। ’

বিশ্বজনীনতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে-আমি বিশ্বের অন্যতম অংশ।  আমি যতই ক্ষুদ্র হই না কেন, আমি অংশ।  আমাকে ছাড়া বিশ্ব নয়।  এই যে বিশ্বজনীনতা, সেটাই কিন্তু আমাদের সমাজ, আমাদের রাষ্ট্রে, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের ঐতিহ্যকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ’

ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবোধের প্রকাশ এবং তার পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এমন মত দিয়েছেন প্রণব মুখার্জি।

ইতিহাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা দেশের স্বাধীনতা গড়ে উঠতে সময় নেয়। বাংলাদেশও সময় নিয়েছে, কিন্তু সময়টা বেশ কম।  কারণ পাকিস্তান সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের সম্পূর্ণ সংযুক্তিকরণ পাকিস্তানের সঙ্গে হয়নি।  প্রথম থেকেই একটা বাধা রয়ে গিয়েছিল, সেটা ভাষা এবং সংস্কৃতিগত।  

তিনি বলেন, অবিভক্ত পাকিস্তানের স্রষ্টা এবং তদানীন্তন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা কায়েদ ই আজম, তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বললেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। সেদিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কিন্তু কায়েদ ই আজমের কন্ঠস্বরের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে বলেছিলেন, না।  বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।  সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাবে না, সেটা মেনে নেওয়া যাবে না।

প্রণব মুখার্জি বলেন, পাকিস্তান কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেমব্লির প্রথম অধিবেশনে তখনকার কংগ্রেস নেতা যিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ছিলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তিনিই প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন-কেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হবে না? তার জন্য তাকে অনেক তিরস্কার এবং লাঞ্ছনাও সহ্য করতে হয়েছিল।  মুক্তিযুদ্ধে তার মৃত্যুও হয়েছিল। কিন্তু সেদিনই তাকে বলা হয়েছিল যে তুমি পাকিস্তান ভাগ করার চেষ্টা করছ ভাষার ভিত্তিতে। তিনি বলেছিলেন, প্রশ্ন তো সেটা নয়।  প্রশ্নটা হচ্ছে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা।

‘সেই ভাষাকে কেন্দ্র করে যে জাতীয়তাবোধের প্রকাশ সেটিই শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ’

উপস্থিত সুধীজনদের সালাম এবং নমস্কার দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রণব মুখার্জি।

মঞ্চে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জিও ছিলেন।   বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জির পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা।

মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে এসে প্রণব মুখার্জি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-লিট ডিগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন।   এরপর অগ্নিযুগের বিপ্লবী সূর্যসেনের স্মৃতি দেখতে রাউজানে তাঁর জন্মভিটায় যান।  

বুধবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে প্রণব মুখার্জির চট্টগ্রাম ছাড়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।