বৃহস্পতিবার (১১ জুন) নগরীর কদমতলীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন।
ডিসি মোস্তাইন বাংলানিউজকে বলেন, পণ্য পরিবহনের জন্য ব্রোকারদের মাধ্যমে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ভাড়া নেওয়ার এই প্রথা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
‘এবার আমরা বলছি, যারা সত্যিকারের ব্রোকার তারা তালিকাভুক্ত হোন। এলাকার প্রভাবশালী যার ইচ্ছা সে-ই এসে ব্রোকার হয়ে যাবে, এটা হবে না। আবার ব্রোকারের ভাড়া করে দেওয়া গাড়ির পণ্য চুরি-ডাকাতির অভিযোগ আমরা সবসময়ই পায়। তালিকা হলে আমরা সেই ব্রোকারকে ধরতে পারব। ’ বলেন ডিসি মোস্তাইন
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ভাড়া নেওয়ার জন্য বন্দোবস্তকারীদের বিরোধের জেরে সম্প্রতি নগরীর কদমতলীতে পরিবহন ব্যবসায়ী ও যুবদল নেতা মো. হারুন খুন হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ বন্দোবস্তকারীদের তালিকা করার একটি দৃশ্যমান উদ্যোগ নিল।
যদিও নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ তারা গত নভেম্বরেই নিয়েছেন। পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই উদ্যোগ তারা নিয়েছিলেন।
এডিসি জানান, মালিক সমিতির কাছ থেকে ফরম নিয়ে পূরণ করে বন্দোবস্তকারীরা জমা দেবেন। এই প্রক্রিয়া চলবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর মালিক সমিতি পূরণ করা ফরমগুলো জমা দেবে পুলিশের কাছে। পুলিশ যাচাই-বাছাই করে যাদের তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেবে তাদের স্মার্টকার্ড দেবে মালিক সমিতি। সেই স্মার্টকার্ড যাদের থাকবে তারাই শুধু ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ভাড়া নিতে পারবে।
অঙ্গীকারনামা আকারে তৈরি ফরমে নাম-পিতার নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ছবি, মোবাইল নম্বর এবং মালিক সমিতির সভাপতির সুপারিশসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা পণ্য দেশের অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাবার জন্য সাধারণত আমদানিকারক নিজে অথবা সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবহন মালিক প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়। মালিক প্রতিষ্ঠান অর্ডার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতে সক্ষম না হলে বন্দোবস্তকারীর দ্বারস্থ হয়। বন্দোবস্তকারী নির্দিষ্ট অংকের কমিশনের বিনিময়ে গাড়ি ভাড়া করে দেন। এছাড়া পরিবহন ঠিকাদারও গাড়ি ভাড়া করে দেয়।
আন্ত:জিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিউর রহমান টিপু বাংলানিউজকে বলেন, এখন বন্দোবস্তকারী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ভাড়া করে দিলেও তাদের কোন ডকুমেন্ট আমাদের কাছে থাকে না। শুধুমাত্র মালিক এবং গাড়ির ডকুমেন্ট থাকে। এতে কোন অপরাধ হলেও বন্দোবস্তকারীদের কোন দায় থাকে না।
‘ইদানিং আরেকটা সমস্যা হয়েছে, বহিরাগত প্রভাবশালীরা মার্কেটে এসে ঝামেলা করে। তারা নিয়মিত বন্দোবস্তকারী না হয়েও গাড়ি ভাড়া নিতে চায়। এদের প্রভাবের কারণেই মার্কেটে সবসময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ’
এডিসি রউফ বলেন, স্মার্টকার্ড বিতরণের পর ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ভাড়া দেওয়া এবং নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম চালু করা হবে। গাড়ি ভাড়া করার পর পাঁচটি স্লিপ তৈরি হবে। একটি থাকবে পুলিশের কাছে। একটি মালিক সমিতি, একটি আমদানিকারক, একটি বন্দোবস্তকারী ও গাড়িতে একটি থাকবে। এই প্রক্রিয়ায় পণ চুরি-ডাকাতি রোধ হবে।
বন্দোবস্তকারীদের ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) মো.কামরান হোসেন ও ট্রাফিক (দক্ষিণ) সুলতান মোহাম্মদ আলী খাঁন, সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্জিনা আকতার এবং আন্ত:জিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহম্মদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
আরডিজি/টিসি