শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বাদ আসর লালদিঘী ময়দানের জানাজায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও অংশ নেবেন। পরে বন্দরনগরীর ষোলশহরের চশমা হিলে তার পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।
সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা জনমানুষের নেতা ছিলেন। লালদিঘী ময়দানেই সব কর্মসূচি করতেন তিনি।
আরও পড়ুন>>
** চট্টল বীরের জীবনাবসান
সদ্য প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর মরদেহ বর্তমানে তার চশমা হিলের বাসায় রাখা হয়েছে। দুপুরে বাদ জুমা মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কোতয়ালির দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর লালদিঘী ময়দানে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জানাজায় অংশ নিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতারা চট্টগ্রামে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভোরে মরদেহ চশমা হিলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মহিউদ্দিনকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করছেন নানা-শ্রেণি পেশার মানুষ।
মরদেহ চশমা হিলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে দেখতে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ ছালাম, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীসহ আরও অনেক নেতাকর্মী।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে বন্দরনগরীর মেহেদিবাগে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবিএম মহিউদ্দিন।
নিজ বাসায় মৃদু হার্ট অ্যাটাক ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হলে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে গত ১১ নভেম্বর রাতে ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পরও কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরদিন দুপুরে মহিউদ্দিনকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৬ নভেম্বর অসুস্থ মহিউদ্দিনকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরের অ্যাপোলো গ্লিনিগ্যালস হসপিটালে তার এনজিওগ্রাম এবং হার্টের দুটি ব্লকে রিং বসানো হয়।
সেখানে ১১ দিনের চিকিৎসা শেষে ২৬ নভেম্বর রাতে মহিউদ্দিনকে নিয়ে দেশে আসেন স্বজনরা। এরপর তাকে ফের স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) মহিউদ্দিনকে নিয়ে চট্টগ্রামে ফেরেন স্বজনরা।
কিন্তু চট্টগ্রামে ফেরার দু’দিনের মাথায় শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে ফের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী।
ছাত্র জীবনেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া মহিউদ্দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধের পর জড়িয়ে পড়েন শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির জনককে হত্যার পর প্রতিশোধ নিতে পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে এরপর ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মহিউদ্দিন চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষত নেতা ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ছাড়াও নেতৃত্ব দিয়েছেন বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও।
দেশজুড়ে পরিচিতি পেলেও রাজনীতিতে চট্টগ্রামের গণ্ডিতেই নিজেকে ধরে রেখেছেন সব সময়। বারবার লোভনীয় আসনের আমন্ত্রণ পেয়েও থেকেছেন চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা হয়ে।
পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন বিএনপির একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হন।
তার সময়ে পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ‘অনন্য দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করে। মৃত্যুর আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আরও পড়ুন>>
** মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে সাজেদা চৌধুরী শোক
** মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শোক
** প্রতিশোধ নিতে চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা
** মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া
** চট্টল বীরের মৃত্যুতে মেয়র নাছিরের শোক
** শোকস্তব্ধ মক্কার মেয়র গলি
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭/আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা
আরডিজি/জেএম/এমএ