ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রেলে বাড়ছে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
রেলে বাড়ছে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে জনপ্রিয় বিরতিহীন ট্রেন সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে চলতি পথে ইঞ্জিন বিকল ও যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা বেড়েছে। এতে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না যাত্রীরা। অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়তে পারছে না। এতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, যান্ত্রিক বিভাগের গাফিলতির কারণেই দেশের জনপ্রিয় পরিবহন সংস্থার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সঠিক তদারকি হলে অনাকাঙ্খিত এসব ত্রুটির ঘটনা ঘটতো না।

বিষয়টি স্বীকার করে রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সুবর্ণ-সোনার বাংলার মতো ট্রেনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায়না। দায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস। পাহাড়তলী-ফৌজদারহাট সেকশানের মাঝখানে একটি বগির চাকা হট এক্সেল হয়ে অচল হয়ে পড়ে। পরে ওই বগি বাতিল করে পাহাড়তলী মার্শালিং ইয়ার্ড থেকে আরেকটি বগি যুক্ত করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

ট্রেনটি সঠিক সময়ে ঢাকা পৌঁছতে না পারায় বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারেনি। প্রায় একঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছেড়ে আসে।

জানা গেছে, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সুবর্ণ ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। এসময় ওয়ার্কশপে ট্রেনের যান্ত্রিক কোন ত্রুটি আছে কিনা তা দেখা হয়। ত্রুটি থাকলে তা মেরামত করে ফিট দেওয়া হয়। কিন্তু বন্ধের পরদিন ১৫ মিনিট চলার পর যান্ত্রিক ত্রুটিতে থেমে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম থাকলেও ওয়ার্কশপে সুবর্ণ ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা কাজ করেনি। তারা চেক করলে ত্রুটি ধরা পড়তো। অথচ নিয়মিত ওভারটাইম ও মাইলেস নিচ্ছে।

সূত্র জানায়, মাত্র তিন মাস আগে সুবর্ণ ট্রেনের এসি চেয়ার (৬৫০৪) কোচটি ওয়ার্কশপ থেকে বের করা হয়। কয়েকদিন আগে চাকা লাগানো হয়। কিন্তু চাকার ডিভাইজে ঠিকভাবে কাজ হয়নি। ফলে মঙ্গলবার চলার সময় গরম হয়ে ধোঁয়া বের হয়।  

এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে রেলের মহাপরিচালক বলেন, যান্ত্রিক বিভাগের গাফিলতি আছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (আরএস) কাছে কৈফিয়ত তলব করেছি। চলতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পরিবর্তন আসবে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ার পরই কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে একঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা করে। অন্যদিকে জালালাবাদ ট্রেন আখাউড়া থেকে একটি ডেড ইঞ্জিন পাহাড়তলী আনার কথা। কিন্তু একঘণ্টা চেষ্টা করেও ইঞ্জিনটি যুক্ত করতে পারেনি। এতে একঘণ্টা দেরিতে ছাড়তে হয়।

গত ১৭ অক্টোবর সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রায় ১ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। ভেক্যুয়ামে ত্রুটির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যেতে পারেনি।

গত অক্টোবর মাসের প্রথম ১২ দিনে আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল ও গুডস ট্রেন চলাচলের পথে মোট ১৭টি ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও ২৭ ট্রেন বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

১ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলার পথে পাঁচটি আন্তঃনগর, চারটি মেইল, তিনটি লোকাল ও পাঁচটি গুডস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটে। এতে এসব ট্রেনের সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে।

ডিএসডব্লিউ (পাহাড়তলী) এস এম মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ওয়ার্কশপের বিয়ারিং শাখার ইনচার্জকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ইনচার্জ) ফাল্গুনী চৌধুরী বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুল হাই তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানালে তিনি বলেন, সিএমই স্যারের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবো না।

ডেকোরাম মেনে তাঁর অফিসে গিয়ে তথ্য নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭

এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।