এই ভিড়, এই স্রোত, এই আগ্রহ-শুধু তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’ ছবিটি দেখতে।
বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ছয়টার পর।
এর আগে সিনেমা হলে এতো মানুষ কবে দেখেছে চট্টগ্রাম?
আলমাস সিনেমা হলে একসঙ্গে প্রায় ৯০০ দশর্কের ছবি দেখার সুযোগ আছে।
এসেছে বন্ধুদের দল, কেউ এসেছেন স্ত্রীকে নিয়ে, কেউ পুরো পরিবারসমেত।
পরিবার নিয়ে ছবিটি দেখতে হলে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী।
কথা হয় এই শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি প্রায় ১৬-১৭ বছর পর সিনেমা হলে এসেছি। বর্তমানে অনেক পরিচ্ছন্ন ছবি হচ্ছে, যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো। হালদাও এমন একটি ছবি। আমাদের আশা থাকবে এরকম আরও ছবি যেন বানানো হয়, যাতে আমরানিয়মিত হলমুখী হতে পারি। ’
‘তবে চট্টগ্রামে এক বা একাধিক সিনেপ্লেক্স হওয়া জরুরি। কারণ সিনেমা হলে সুযোগ সুবিধা তেমন নেই। সিনেপ্লেক্স হলে রুচিসম্মত দর্শকদের ছবি দেখার আগ্রহ আরও বাড়বে। ’ যোগ করেন এই শিক্ষক।
শুধু তিনি নন, পরিবার পরিজন নিয়ে হালদা ছবি দেখতে এসেছিলেন আরও অনেকে। তাদের একজন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম। তিনি পুরো পরিবার নিয়ে উপভোগ করেছেন হালদা ছবিটি।
তিনি বলেন, ‘ভালো চলচ্চিত্রের যে দর্শক আছে, তা এতেই পরিস্কার। ’
এতো দর্শক দেখে হালদা ছবিটির অন্যতম মুখ নুসরাত ইমরোজ তিশাও যেন কিছুটা বিস্মিত।
তিনি বলেন, ‘এতো এতো মানুষ ছবিটি দেখতে আসলো। এটা সত্যিই অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আগে কখনও চট্টগ্রামে সিনেমা হলে আসা হয়নি। এবারই প্রথম অভিজ্ঞতা হলো। ভবিষ্যতে ছবি নিয়ে আপনাদের সামনে প্রতিবার আসবো। ’
আর ছবিটির পরিচালক তৌকির আহমেদের ভাষায়, ‘ছবিটি মুক্তি পেয়েছে এক সপ্তাহ হলো। এখনও কোনো খারাপ রিভিও পাইনি। আর আজ তো চট্টগ্রামের দর্শকরা দেখিয়ে দিল। ’
এ তো গেল ছবিটির কলাকুশলী আর উঁচু লেবেলের দর্শকদের কথা। এবার বলা যাক সাধারণ দর্শকদেরও কথা।
বন্ধুদের দল নিয়ে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ গুহ। ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্যে দেখা গেছে তাদেরকেও।
সৌরভ গুহ বলেন, ‘হালদা পুরোপুরি পরিবার পরিজন নিয়ে দেখার মতো একটা ছবি। ছবিটি যখন তৈরি হচ্ছিল তখনি বুঝেছিলাম এটা দর্শকরা লুপে নেবে। শনিবারের বিকেল তাই দেখিয়ে দিল। ’
ভালো ছবির দর্শক আছে তা ঠিক। কিন্তু এর আগে উল্টো চিত্রটারও দেখা হয়ে যাওয়া দেশের শীর্ষ পরিচালকদের একজন তৌকির আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভালো ছবি বানাবো তা ঠিক। কিন্তু আমাদের তো ছবি করার পেছনের খরচ তুলতে হবে। আমাদের দর্শকরা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেননি। তারা এখনও বস্তাপঁচা ছবি দেখতে অভ্যস্ত। এটাই ভালো ছবি না হওয়ার পেছনের বড় কারণ ‘
তাই হাসতে হাসতে তিনি প্রশ্ন রাখেন-‘এখন কি পরিচালকরা নামবেন, না আপনারা (দর্শক) একটু উঠবেন। ’
তৌকিরের কথায় যুক্তি আছে বটে...
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
টিএইচ/টিসি