ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

'বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত হলো বৌদ্ধদের সমগ্র ত্রিপিটক'

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৭
'বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত হলো বৌদ্ধদের সমগ্র ত্রিপিটক' 'বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত হলো বৌদ্ধদের সমগ্র ত্রিপিটক'

চট্টগ্রাম: 'পালি ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মূখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র ত্রিপিটক বোধিদর্পন প্রকাশনীর মাধ্যমে ৫৯ খণ্ডে বাংলা অনুবাদের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত হলো। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বুদ্ধের মুখনিসৃত বাণী এই প্রথমবারের মতো বড়ুয়া বৌদ্ধরা বাংলা অনুবাদ করে সাহিত্যকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছেন'।

শুক্রবার (০৮ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর নগরীর চান্দগাঁও সার্বজনীন শাক্যমুনি বিহারে ষষ্ঠ সংগীতির শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটকের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটক প্রকাশনা ও বিতরণ অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আয়োজনে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বৌদ্ধদের সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু সংঘরাজ ধর্মসেন মহাথের।

সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি সংঘবন্ধু অজিতানন্দ মহাথেরোর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চগুরু উপসংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের ও ধর্মপ্রিয় মহাথের।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ থের।

উদযাপন কমিটির মহাসচিব উজ্জ্বল বড়ুয়া বাসু ও অ্যাডভোকেট রিগ্যান বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, চবি পালি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বড়ুয়া, চট্টগ্রাম কলেজের পালি বিভাগের প্রফেসর ড. অর্থদর্শী বড়ুয়া, জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির, অনোমার মহাসচিব আশীষ বড়ুয়া,  প্রকৌশলী অনুপম বড়ুয়া, অমিতাভ সম্পাদক শ্যামল চৌধুরী, নেপাল বড়ুয়া প্রমুখ।

আয়োজকেরা জানান,  ‘আড়াই হাজার বছরেরও পূর্বে মহামানব গৌতম বুদ্ধ তৎকালীন পালি ভাষাতেই ধর্মপ্রচার করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধ ৪৫ বছর ধরে যে ধর্মপ্রচার করেছিলেন তারই নিবন্ধ এই পবিত্র গ্রন্থ ত্রিপিটক। সময়ের প্রয়োজনে বৌদ্ধরা পালি ভাষায় রচিত ত্রিপিটক গ্রন্থটিকে বাংলা অনুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেটির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন অগ্রমহাপণ্ডিত প্রজ্ঞালোক মহাথেরো। ’

‘প্রজ্ঞালোক মহাথের পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটক বাংলায় অনুবাদের জন্য ১৯২৮ সালের ১২ আগস্ট রেঙ্গুনে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘বৌদ্ধ মিশন প্রেস’ গঠন করেন। এই প্রেস থেকে তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪২ সালের ২২ ডিসেম্বর বোমার আঘাতে এই প্রেসের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। বিশেষ করে প্রেসের যন্ত্রপাতি, মুদ্রিত বই, পাণ্ডুলিপির ক্ষতি হয় বেশি। ‘বৌদ্ধ মিশন প্রেস’ প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে আরও কিছু সংস্থার খবর জানা যায়, যেসব সংস্থা ত্রিপিটক প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল যেমন : ‘যোগেন্দ্র-রূপসীবালা ট্রাস্ট’, ‘শ্রী ত্রিপিটক প্রকাশনী প্রেস’, ‘ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড’, ‘পালি বুক সোসাইটি’, ‘ধর্মাধার বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশনী’, ‘মহাবোধি বুক এজেন্সী’সহ আরও অনেক। এসময়ে খণ্ড খণ্ড ভাবে অনেকেই ত্রিপিটক অনুবাদ করেন। তারপরেও বেশ কিছু খণ্ড অননূদিত অবস্থায় থেকে যায়। ’

‘পরবর্তীতে পরমপূজ্য সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরোর মেধা ও প্রচেষ্টায় ত্রিপিটকের অননূদিত বইগুলো অনুবাদ ও প্রকাশিত হতে থাকে। অতঃপর ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ত্রিপিটকের অনুবাদ হয়নি এরকম সর্বশেষ গ্রন্থ কথাবত্থু অনুবাদের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো প্রিন্ট ভার্সনে প্রকাশনার কাজ শেষ হয়।

১৮৮৭ সালে প্রথম পণ্ডিত ধর্মরাজ বড়ুয়ার সুত্তনিপাতের মাধ্যমে পালি থেকে বাংলা অনুবাদের কাজ শুরু হয়ে ২০১৬ সালে উজ্জ্বল বড়ুয়া বাসু কর্তৃক সর্বশেষ কথাবত্থুর মাধ্যমে ৫৯ খণ্ডে প্রথমবারের মত প্রিন্ট ভার্সনে এর অনুবাদ কাজ শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।