ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পানির জন্য এনসিটি শ্রমিকদের ১ মাইল পাড়ি

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
পানির জন্য এনসিটি শ্রমিকদের ১ মাইল পাড়ি ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের সব সুবিধা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পানি ও টললেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ও সিসিটি ইয়ার্ডের শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা বলছেন, বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও আমলে নিচ্ছে না। ফলে ব্যবহার ও খাবার পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পানি এবং টয়লেট ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমঘণ্টা।  

বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে কয়েকটি স্থানে পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে।

টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। তবে শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ট্যাংক বসানো হলেও সেখানে পানি দেওয়া হয় না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনসিটির সিএফএস শেডে পানির ব্যবস্থা থাকলেও টয়লেট সুবিধা নেই। এনসিটি ইয়ার্ডে পানি এবং টয়লেট সুবিধা নেই। কেন্টিন থাকলেও সেটি রাত ৮টায় বন্ধ হয়ে যায়। অথচ শ্রমিকদের সারারাত কাজ করতে হয়। জিসিবি ইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকরাও পানি ও টয়েলেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি মো.মীর নওশাদ বাংলানিউজকে বলেন, এনসিটি ৫ নম্বর ইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকদের পানির প্রয়োজন হলে কিংবা প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হলে এক মাইল পাড়ি দিয়ে সিসিটি ইয়ার্ডে আসতে হয়। সিসিটি ইয়ার্ডে দুটি টয়লেট থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি বলেন, শ্রম আইন ও বন্দর আইনে শ্রমিকদের সব সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ের সমাধান করা হচ্ছে না।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিটি ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার চাপ সামলাতে না পারলে ৫ নম্বর ইয়ার্ডে ডেলিভারি দিতে হয়। অথচ এটি ডেলিভারি পয়েন্ট নয়। সেখানে কাজ করার সময় শ্রমিকদের পানির প্রয়োজন অথবা টয়লেট ব্যবহারের দরকার হলে এক মাইল হেটে সিসিটিতে আসতে হয়। আসা-যাওয়ায় দুই মাইল পাড়ি দিতে হয় একজন শ্রমিককে। দিনের বেলায় কেন্টিনে খাবার ব্যবস্থা থাকলেও রাত ৮টা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রাতে যারা কাজ করেন তাদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

শ্রমিকদের এ সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত মন্তব্য করে মীর নওশাদ বলেন,‘সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে তো তাই বন্দর মনে করছে খুব ভাল অবস্থা। কোন একটি দুর্ঘটনা ঘটলেই তাদের(বন্দর কর্তৃপক্ষের) হুশ ফিরে। অঘটন ঘটার আগে তাদের নজরে আসে না। অথচ সমস্যাগুলো সমাধানের সক্ষমতা বন্দরের আছে। ’

বন্দর শ্রমিকদের পানি ও টয়লেট সমস্যার সমাধানে ১৫ দিনের আল্টিমেটান দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘আগামী সোমবার বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

পানি না থাকার বিষয়ে শ্রমিকরা শনিবারও অভিযোগ করেছে জানিয়ে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মো.জানে আলম বাংলানিউজকে বলেন, পানি না থাকায় হাত-মুখ পর্যন্ত পরিস্কার করতে পারে না শ্রমিকরা। ফলে খাওয়ার জন্য এক মাইল হেটে সিসিটিতে আসতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে কিছু কিছু সমাধান হয়েছে। বাকিগুলো সমাধান হবে।

শ্রমিকদের জন্য পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকাকে অমানবিক মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যাদের শ্রমে-ঘামে বন্দর এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সমস্যা সমাধান করা জরুরি। মানুষের অতি প্রয়োজনীয় দুটি বিষয় দীর্ঘদিন ধরে সমাধান না করাকে দুঃখজনক।

জরুরি ভিত্তে পানি সমস্যার সমাধান এবং কয়েকটি টয়লেট নির্মাণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭

এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।