ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রোহিঙ্গা মোখবোলের আরেক রোহিঙ্গার কাছে গরু হারানোর গল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
রোহিঙ্গা মোখবোলের আরেক রোহিঙ্গার কাছে গরু হারানোর গল্প মোখবোলের গরু উদ্ধার করিয়ে দেবার সেই আর্তি

চট্টগ্রাম: ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের-আগস্টের ২৯ তারিখের।এর চারদিন আগ থেকেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। এই রোহিঙ্গা ঢলের একজন হলেন মোখবোল হোছন।

তিনি স্ত্রী-সন্তানদের পাহাড়ে লুকিয়ে রেখে অনেক কষ্টে আনা সাতটি গরু নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। উখিয়া থানা এলাকায় আগে থেকে অবস্থান করা তার দূর সম্পর্কের ভাগিনা আইয়ুব আলীর কাছে সেই গরু সাতটাসহ খরচের তিন হাজার টাকা দিয়ে তিনি আবার স্ত্রী-সন্তানদের আনতে পাহাড়ের দিকে রওয়ানা দেন।

দু-তিনদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আসেন মোখবোল হোছন।

এরপর মোখবোল, আইয়ুব আলীর কাছে গরুগুলোর বিষয়ে খোঁজ নেন।

কিন্তু আইয়ুব আলী এই কথা সেই কথা বলে সময় নিতে থাকেন। বলতে থাকেন, গরু আছে, পরে দিয়ে দেবেন। কিন্তু এই দিবে দিবে বলে ৫৩দিন পার হয়ে গেলেও শনিবার (২১ অক্টোবর) পর্যন্ত গরুগুলো ফেরত দেয়নি।

এদিকে শনিবার মোখবোল হোছন তার গরুগুলো উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।

সেই আবেদপত্রে মোখবোল লিখেন, ‘অনেক কষ্টের বিনিময়ে গরুগুলো আনলাম। আজ দেড় মাসেরও বেশি সময় পার হলেও সেই গরুগুলো ফেরত দিচ্ছে না আমার জেঠাতো ভাগিনা আইয়ুব আলী। ’

‘আমার সঙ্গে আমার গরুগুলো নিয়ে আইয়ুব এতো বড় প্রতারণা-বেঈমানী করলো। একই বার্মাইয়া (মিয়ানমার) লোক হয়ে, আপন মানুষ হয়ে। –প্রশ্ন রাখেন মোখবোল আলী।

সবশেষে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গরুগুলো উদ্ধার করে দেবার আবেদন জানিয়ে লিখেন, ‘দয়া করে আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আমার কষ্টের দিনরাত না খেয়ে পালিত সাতটি গরু উদ্ধার করে দিবেন। ’

মোখবোল স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তবে অভিযুক্ত আইয়ুব আলী তার স্বজনদের নিয়ে আগে থেকে থাকা একটি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হয়ে রোহিঙ্গা সংকটে কাজ করার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সৈয়দ মোরাদ আলী বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রশাসন মোখবলের অভিযোগটি নিয়েছে। তার গরুগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত আইয়ুব আলীকে খোঁজা হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘এটিই একমাত্র অভিযোগ নয়। এরকম অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। আগে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে যারা নতুন আসছেন তাদের কেউ কেউ জিনিসপত্র-গবাদি পশু জমা রাখছেন। কিন্তু পরে সেই জিনিসপত্র আর গবাদি পশু তারা ফেরত দিচ্ছেন না। বাংলাদেশি কিছু দালালদের যোগসাজশে তারা তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। আমরা সেসব বিষয়গুলোও দেখছি যাতে-কোনো ধরণের সমস্যার সৃষ্টি না হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।