ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছাত্রসেনা থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি?

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
ছাত্রসেনা থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি? এস এম বোরহান উদ্দিন

চট্টগ্রাম: প্রায় দুই দশক পর ঘোষিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়া এস এম বোরহান উদ্দিন অতীতে ইসলামী ছাত্রসেনার রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা এই অভিযোগ করেছেন।

তবে এস এম বোরহান উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি কোনদিন ছাত্রসেনার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না।   ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে বিতর্কিত করার জন্য এই অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) ঘোষিত দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যের নতুন কমিটিতে এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।  বোরহান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং আবু তাহের ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও দক্ষিণের আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

কমিটি ঘোষণার পর সন্ধ্যায় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন।    

নেতাকর্মীদের কয়েকজন বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, বোরহান ২০০৬-২০০৭ মেয়াদে ইসলামী ছাত্রসেনা বোয়ালখালী উপজেলা শাখার অর্থ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।   এরপর ২০০৯ সালে তিনি একই উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।  এছাড়া বোয়ালখালীতে পরবর্তী কমিটি গঠনের দায়িত্বও ছিল এই বোরহানের উপর।

পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকে প্রমাণস্বরূপ চারটি দলিলও বাংলানিউজের কাছে পাঠানো হয়েছে।   এতে দেখা গেছে, ২০০৬-২০০৭ মেয়াদে ইসলামী ছাত্রসেনার কমিটিতে অর্থ সম্পাদক পদে বোরহানের নাম লেখা হয়েছে ‘এস এম বুরহান উদ্দিন’।   ২০০৯ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রমাণ হিসেবে যে দলিল দেয়া হয়েছে তাতে অবশ্য বোরহানের নাম লেখা আছে।   আর বোয়ালখালীতে কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে শুধু বোরহান লেখা আছে।

জানতে চাইলে এস এম বোরহান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এখন ফেসবুকের যুগ।   এডিট করে যে কোন কিছুতে যে কারও নাম বসানো যায়।   এডিট করে বসাতে গিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা কোথাও বুরহান, আবার কোথাও বোরহান লিখেছে।   বোয়ালখালীতে বোরহান নামে ছয়জন ছাত্রসেনা করে। ছাত্রলীগে আছে চারজন।   ষড়যন্ত্রকারীরা যার নাম বলছে সেই বোরহান আমি নয়।

বোরহান দাবি করেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত কধুরখীল মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।   এজন্য তাকে ছাত্রসেনার মতো একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।   অথচ তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।   ২০০৫ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।  

নগর ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু মোহাম্মদ আরিফের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেছেন বলে দাবি করেছেন।  

জানতে চাইলে আবু মোহাম্মদ আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, বোরহানের সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১১ সালে।   তিনি কখনোই চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না।   আমরা তাকে ছাত্রলীগে আনতে চেয়েছিলাম।   কিন্তু বোরহান আমাদের জানিয়েছিলেন, তিনি দক্ষিণ জেলায় মোছলেম ‍ভাইয়ের (মোছলেম উদ্দিন আহমেদ) সঙ্গে রাজনীতি করেন।

বোরহানের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীলে।   মোছলেম উদ্দিনের বাড়িও একই এলাকায়।  

বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরহান কখনোই সক্রিয়ভাবে উপজেলায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।   প্রায় ১০ বছর আগে বোরহান উপজেলা গাউছিয়া কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।   ২০০৯ সালের পর তিনি কিছুদিন বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন।

বোয়ালখালীর এক সাংবাদিক বাংলানিউজকে বলেন, বোরহান উপজেলা কিংবা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এমন ‍গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়।   হঠাৎ করে তিনি সভাপতি হয়ে যাওয়া নিয়ে এখানকার নেতাকর্মীরাও বিস্মিত।  

১৯৯৮ সালে আব্দুল কাদের সুজনকে সভাপতি এবং আ ম ম টিপু চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়েছিল।   এরপর ২০০৩ সালে মো.ফারুক ও ২০১১ সালে আব্দুল মালেক জনিকে আহ্বায়ক করে দুটি আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

২০ বছর পর দক্ষিণে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, বিক্ষোভ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad