ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১০ মিনিটেই আঁকেন হুবহু মানুষের ছবি

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
১০ মিনিটেই আঁকেন হুবহু মানুষের ছবি এম এ আজিজ

চট্টগ্রাম: মাত্র ১০টা মিনিট। এই তুমুল ডিজিটালযুগেও ছবি তুলে প্রিন্ট দিতে দিতে এর চেয়েও যেন বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু বছর ৫০ ছুঁই ছুঁই এম এ আজিজ এই ১০মিনিটেই আপনার হুবহু ছবি এঁকে দিতে পারবেন। সেই হাতের আঁকা ছবিতে চুল থেকে চোখ, টোল পড়া মুখ-সবই যেন অবিকল-একদম স্পষ্ট।

নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে বসে কাগজের মাপ বেধে এক একটা সাদাকালো পোর্ট্রেট ৩০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে এঁকে দিচ্ছেন তিনি । রঙিন হলে অবশ্য সময় আরেকটু বেশি যায়।

শুক্রবারের (১৩ অক্টোবর) বেলা আড়াইটা। ঝিমঝিমে আলস্য-মাখা ভর দুপুরে তখনও শেষ না হওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা পোর্ট্রেটে পেন্সিলের আচড় বসাচ্ছিলেন।

মাথায় হ্যাট, চোখে চশমা-একমনে রবীন্দ্রনাথের অবয়ব গড়ে তুলেছেন শিল্পী।

আউটার স্টেডিয়ামে এবার তার আসা চলমান বস্ত্র, তাঁত ও জামদানি মেলা উপলক্ষে। সেখানে ১০ হাত বাই ১০ হাতের একটি জায়গা বরাদ্দ নিয়ে তিনি আঁকছেন মানুষের ছবি। আশপাশে ঝুঁলিয়ে রেখেছেন নিজের আঁকা বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের ছবি-রবীন্দ্রনাথ থেকে মালালা ইউসুফজাই।

ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয়, এম এ আজিজের সঙ্গে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া মানুষটা জানালেন তার অংকন শিল্পী হওয়ার কথা।

একটা অ্যাড ফার্ম চালাতেন। সঙ্গে ব্যানার, সাইনবোর্ডও লিখতেন। সেসব বাদ দিয়ে ২০০৭ সালে ছবি আঁকার কাজে নেমে পড়েন মাঠে। সেবছর ঢাকা বইমেলা দিয়ে শুরু। তারপর চট্টগ্রাম বাণিজ্য মেলা, ঢাকা বাণিজ্য মেলা থেকে শুরু করে পুরো দেশের বিভিন্ন জেলায় হওয়া বাণিজ্য মেলায় যাওয়া হয়েছে এম এ আজিজের। সবমিলিয়ে গত ১০ বছরে পুরো দেশের প্রায় ১০০টিরও উপরে মেলায় বসা হয়েছে তার। পুরো মনকে যেন ছবি আকাঁতেই নিবেদন করেছেন এম এ আজিজ

‘মেলা যখন থাকে তখন মেলাতেই বসি। আর মেলা না থাকলে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোই আমার ঠিকানা। ’-বলে যান এম এ আজিজ।

মেলায় তিন সাইজের কাগজে সাদাকালো ছবি আঁকছেন এম এ আজিজ। প্রকারভেদে সরাসরি সামনা সামনি বসিয়ে ছবির আঁকার ক্ষেত্রে ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকায় সাদাকালো ছবি এঁকে দিচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে মোবাইলের পর্দায় ছবি দেখে কিংবা ছবি থেকে ছবি আঁকতে নিচ্ছেন প্রকারভেদে ৫০০, ৭০০  এবং ১০০০টাকা।

রঙিন ছবির ক্ষেত্রে অবশ্য ১০০০, ১৫০০ ও ২০০০ টাকা রাখছেন তিনি। এছাড়া অর্ডার দিলে ছবি এঁকে দিতে পারেন অয়েল পেন্টিংয়েও।

এতো নিখুঁত ছবি কিভাবে আঁকতে পারেন-এমন প্রশ্নে নরম গলায় এম এ আজিজের জবাব, ‘প্রচুর স্ট্যাডি করেছি। যখন পড়তাম তখনি মডেল বসিয়ে তাদের ছবি আঁকার ট্রাই করতাম। ধীরে ধীরে রপ্ত করে নিয়েছি। ’

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এম এ আজিজের বাড়ি বোয়ালখালীর কদুরখীল এলাকায়। স্ত্রী ও দুই সন্তান তার সুখের সংসার। তাদের নিয়ে থাকেন নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায়। থাকেন বললে অবশ্য ভুল হবে। কারণ বছরের প্রায় পুরোটা সময়েই যে যাযাবরের মতো এই মেলা সেই মেলায় কেটে যায় তার।

ছেলে এম এ আসরাদ এবার স্নাতকে ভর্তির প্রতিযোগিতায় নামবেন। মেয়ে আফিয়া আজিজা পড়ছে সপ্তম শ্রেণিতে। ছবি আঁকা দিয়ে বেশ চলে যাচ্ছে সংসার।  মুখে এক গাল হাসির রেখা টেনে বলেন এম এ আজিজ।

ছবি আঁকা শেষে সবাইকে ধরিয়ে দিচ্ছেন একটি ভিজিটিং কার্ড। দিনশেষে সেই ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে এম এ আজিজের কাছে ফোন আসে, আসে খুদে বার্তা-‘ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার আঁকা ছবি পছন্দ হয়েছে সবার। ’

তৃপ্তি নিয়ে বিছানায় যান এম এ আজিজ। ছোট একটি ব্যাগে কয়েকটা তুলি, পেন্সিল আর ছবি আঁকার চার্ট পেপার, তার সঙ্গেই কয়েকটা জামা-প্যান্ট। সেই ব্যাগটা নিয়েই পরদিন আবারও  বেরিয়ে পড়েন এম এ আজিজ।

এই বেরিয়ে পড়া মানুষ আঁকার জন্যা!

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।