সাকিবের অর্জনটা কতোবড় তা বোঝাতে নিচের তথ্যটুকুই যথেষ্ট।
গুগল বলছে-ভারতের উত্তরে শীতল মরুভূমির দেশখ্যাত লাদাখের অবস্থান।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের আগে মাত্র একজনই এই পথে সাইকেল চালানোর দুঃসাহস দেখিয়েছেন। নিয়াজ মোর্শেদ নামের ওই তরুণ পাড়ি দিয়েছিলেন ৫১৫ কিলোমিটার। তবে বিভিন্ন পথ ঘুরে খারদুংলা যেতে নিয়াজের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সাকিবকে। পরে আবার সেখান থেকে এগোনোর পর লেহ'তে ফিরে আসা পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ১০৩ কিলোমিটার সাইক্লিং করেছেন তিনি।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ সড়কপথে সাইকেল চালিয়ে ওঠা সাকিবের এটাই প্রথম কোনো উঁচু সড়কে ওঠা নয়। এর আগে প্রথম সাইক্লিস্ট হিসেবে জয় করেছেন দেশের সর্বোচ্চ সড়কপথ থানচি-আলিকদম। সেটি ভালোভাবে সম্পন্নের পর পা বাড়ান খারদুংলা পাসের পথে।
গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। ছোটকাল থেকেই গ্রামের সরু সড়ক থেকে আলপথ-তার সাইকেলের চাকার স্পর্শ লাগেনি এমন কোনো পথই যেন বাকি নেই। সাইকেল চালিয়ে ওপরে ওঠার নেশাটা জাগে মূলত ২০১০ সালেই।
বাকিটা শুনুন তার মুখ থেকেই।
‘এইচএসসি পাশের পরই মূলত উঁচু সড়কে সাইকেল চালানোর নেশা জাগে। সেই থেকে শুরু। প্রথমে ছোটখাটো পাহাড়ি সড়কে সাইকেল চালিয়ে কৌশল রপ্ত করেছি। এরপর দেশের প্রথম সাইক্লিস্ট হিসেবে সাইকেল চালিয়েছি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়কপথ থানচি-আলিকদমে। তার আগে টেকনাফ থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত সাইকেল চালিয়েছি। সবশেষে তো বিশ্বের সর্বোচ্চ মটরেবল সড়কপথে সাইকেল চালিয়ে আসলাম। পুঁতে দিয়ে আসলাম দেশের পতাকাও। ’
তবে খারদুংলা পাস এলাকায় থাকা সাইনবোর্ডের সূত্র ধরে সাকিব খারদুংলা পাসকে বিশ্বের সর্বোচ্চ মটরেবল সড়কপথ দাবি করলেও এটি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
চলতি বছরের ১৯ জুন খারদুংলা পাস জয়ের নেশায় ভারতের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন সাকিব। ২৪ জুন থেকে শুরু করেন যাত্রা। তবে মাঝপথে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাতদিন অবসর সময় কাটাতে হয়েছে। ১৮ জুলাইয়ের বেলা সাড়ে ১১টায় পৌঁছে যান খারদুংলা পাসে।
সাকিব বলেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পথে ওঠাটা সহজ ছিল না একেবারেই। কখনও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কখনও বা হাড় হিম হওয়া ঠান্ডা, ছিল অক্সিজেন না পাওয়ার ভয়ও। সঙ্গে বারবার গতি থামিয়ে দিচ্ছিল পুরনো সাইকেল। তবুও আমি থামিনি। সব বাধাকে থোড়াই কেয়ার করে এগিয়ে গেছি স্বপ্নপূরণে। ’
তারও আগে টাকার অভাবে ভারতের ভিসা করতেও দেরি হয়ে যায় এই তরুণের। পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ঘুরেছেন এ দ্বারে-ও দ্বারে। সাড়া মেলেনি কোথাও। সবশেষে কিছু বড় ভাই এগিয়ে আসেন সাকিবের স্বপ্নপূরণে।
এখন সাকিবের স্বপ্ন একটাই-‘সাইকেল চালিয়ে পুরো বিশ্ব জয়। ’
হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সেটিও পূরণ হয়ে যাবে তার।
সাকিব যে ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’—মূলমন্ত্রেই দীক্ষিত।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
টিএইচ/আইএসএ/টিসি