বাংলাদেশের প্রতিবাদের জবাবে মিয়ানমার উসকানির বিষয়টি এড়িয়ে জানিয়েছে, তাদের ভূমিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতেই তারা সীমান্তে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থলসীমান্তের মধ্যে তুমব্রু ও ঘুমধুম নিয়ন্ত্রণকারী ৩৪ ব্যাটেলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল মঞ্জুরুল আহসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ২৫ আগস্টের পর থেকে সীমান্তের কাছাকাছিতে আমরা প্রচুর গুলির শব্দ পেয়েছি।
তারা বলছে যে, তাদের দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। মূলত এটা ঠেকানোর জন্য তারা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। ’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে দফায় দফায় মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। গত ১০, ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের ড্রোন ও হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে উসকানিমূলক কর্মকান্ড হিসেবে তুলে ধরে।
বিজিবি ককর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে অন্ত:ত দুই সপ্তাহ বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গুলিবর্ষণের শব্দ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে কয়েকবার গুলি ছুঁড়েছে মিয়ানমার। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় ভূমি মাইন পুঁতে রাখে যা বিস্ফোরণে এই পর্যন্ত ৫ জন নিহত এবং ১২ জন আহতের তথ্য আছে বিজিবির কাছে।
বিজিবি সূত্রমতে, ৩৪ ব্যাটেলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খানের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে অন্ত:ত ১০ বার প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে।
বিজিবির এই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের সমপর্যায়ের কর্মকর্তার কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। মহাপরিচালকের মাধ্যমেও সেদেশের সমমর্যাদার কর্মকর্তার কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অব্যাহত উসকানিমূলক কর্মকান্ডের পরও বিজিবি প্রতিবাদ পত্র পাঠানোর মধ্য দিয়েই তাদের জবাব পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ রাখার নীতি নিয়েছে বিজিবি।
সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মিয়ানমারের উসকানির বিপরীতে বাংলাদেশের নীতি কি হবে, তা আবারও স্পষ্ট জানিয়ে দেন। সরকারের এই জেষ্ঠ্য মন্ত্রী বলেন, বর্ডারে অনেক উসকানিমূলক কর্মকান্ড হয়েছে। আরও হতে পারে। আমরা কোন উসকানির ফাঁদে পা দেবো না, এটাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ।
অব্যাহত উসকানির বিপরীতে বিজিবির প্রতিবাদপত্র পাঠানোর নীতির বিষয়ে একটি ব্যাখা দিয়েছেন আধা সামরিক বাহিনীটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। সোমবার কক্সবাজারের টেকনাফে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে বিজিবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা যদি উসকানির ফাঁদে পা দিতাম, তাহলে আরেকটি ফ্রন্ট খুলে যেতো।
গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অব্যাহত গুলি আর রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিতে শুরু করে সেনাবাহিনী। মগদের বিরুদ্ধেও রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগ আছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
আরডিজি/টিসি