ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ন্যাশনাল হসপিটালে নবজাতক হত্যার অভিযোগ চবি শিক্ষকের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
ন্যাশনাল হসপিটালে নবজাতক হত্যার অভিযোগ চবি শিক্ষকের এ নবজাতককে ভুল চিকিৎসায় হত্যার অভিযোগ করেছেন শাহ আলম ও সুমনা আকতার দস্পতি

চট্টগ্রাম: নগরীর মেহেদিবাগের বেসরকারি ন্যাশনাল হসপিটাল চট্টগ্রাম (প্রা.) লিমিটেডে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে নবজাতককে হত্যা করার অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষক।  

চবি’র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ন্যাশনাল হসপিটালে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আমার স্ত্রী সুমনা আকতার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফুটফুটে ছেলের মা হন। তখন গাইনি বিশেষজ্ঞ বলেন মায়ের প্রেশার আছে।

বাচ্চাকে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখলে ভালো হবে। এ সময় বাচ্চা কান্নাকাটি করে, প্রস্রাব করে।
অর্থাৎ শিশুটি সুস্থ ছিল। এরপর ন্যাশনাল হসপিটালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. নজরুল কাদের শিকদার ইম্যাচিউরড বেবি বা ‘অপরিপক্ব শিশু’ বলে ইনকিউবিটরে ঢুকিয়ে দেন। ’

এ শিক্ষক বলেন, প্রথম দুদিন ডা. নজরুল কাদের শিকদার জানান, শিশু সুস্থ আছে। তৃতীয় দিন বলেন একটু শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। এ পাঁচ দিনে ওয়ার্মার দিয়ে শিশুটিকে প্রচুর হিট দেওয়া হয়। কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শিশুর মায়ের বুকের দুধ বা কোলে দেয়নি। তার মাথায় পাঁচটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার নাকে টিউব লাগিয়ে রাখা হয়। সবশেষে আমাদের ৫৪ হাজার টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হলো, অর্ধেক টাকা আজকেই (শনিবার) দিতে হবে। নয়তো সমস্যা হবে। আমি বলি, আজ তো শনিবার, কাল রোববার দেব। এ কারণেই আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে।

মো. শাহ আলম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, বাবার কাঁধে যখন নবজাতকের মরদেহ ওঠে তার কষ্ট ভুক্তভোগীই শুধু জানেন। একটি নিষ্পাপ শিশুকে, সুস্থ শিশুকে যখন মেরে ফেলা হয় নির্মমভাবে তখন মেনে নেওয়া কঠিন। সেই কঠিন সত্যকে পাথর চাপা দিয়েই আমি বেঁচে আছি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়াই ডা. নজরুল কাদের শিকদার শিশু বিভাগের প্রধান হয়েছেন। তিনি এনআইসিইউকে টাকার গাছে পরিণত করেছেন। তিনি আমার ঘরের সুখ কেড়ে নিয়েছেন। চোখের পানিতে ভরিয়ে দিয়েছেন পুরো পরিবারকে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। তিনি যাতে প্র্যাকটিস করতে না পারেন সেই ব্যবস্থা চাই।

শাহ আলম ও সুমনা আকতার দম্পতির বড় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তৃতীয় সন্তান হারানো সুমনার দুঃখ একটাই সাড়ে আট মাস যে সন্তানকে গর্ভে রেখেছেন তাকে একবার কোলে নিতে পারেননি। আদর করতে পারেননি।

কাঁদতে কাঁদতে বাংলানিউজকে বলেন, ‘জীবিত সন্তানকে একটু কোলে নিতে পারিনি, আদর করতে পারিনি এটাই বড় কষ্টের। আজ আমার ছেলে আকাশের তারা হয়ে গেছে। এ রকম আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয় সেই ব্যবস্থা চাই। একজন অমানবিক হৃদয়ের মানুষের নবজাতকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার যেন না থাকে সেই ব্যবস্থা চাই। ’ আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন এই মা।  

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডা. নজরুল কাদের সিকদারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করলে বলেন, মো. শাহ আলমের শিশুটি মাতৃগর্ভে ছিল মাত্র ৩২ সপ্তাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ না হলে ফুসফুস ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না। ওজন কম ছিল। বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর ছিল। আমরা উনাকে কাউন্সেলিং করেছি। সন্তান মারা যাওয়ায় উনি মনে কষ্ট পেয়েছেন বলেই হয়তো অভিযোগ করছেন।

তিনি বলেন, আমরা শতভাগ চেষ্টা করেছি। অভিভাবকরা মনে করেন ডাক্তারদের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু হয়। আমরা বাচ্চার মা-বাবার পছন্দের ডাক্তারকে হাসপাতালে অ্যালাউ করি। প্রয়োজনে মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে থাকি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।