পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার শেষ প্রান্ত থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমান্তপথ শুরু, যা শেষ হয়েছে ঘুমধুম এলাকায় এসে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্তপথ আছে ২০৮ কিলোমিটার।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্টে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়া মজবুত করার কাজ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে পুরনো কাঁটাতার সরিয়ে লাগানো হচ্ছে নতুন তার। যেসব জায়গায় তার ছিঁড়ে লোকজন প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে সেগুলোতে নতুন তার দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়া কাঁটাতারের কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। কম উচ্চতাসম্পন্ন লোহার পিলার সরিয়ে লাগানো হচ্ছে বেশি উচ্চতার পিলার। তার এবং পিলার বেয়ে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কাঁটাতারগুলো দৈর্ঘে্য এবং প্রস্থে বাড়ানো হয়েছে। পিলারগুলো কমপক্ষে তিন থেকে চার ফুট উঁচু করা হয়েছে বলে তথ্য আছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে।
মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তত্তাবধানে এই কাজ চলছে বলেও তথ্য আছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে।
জানতে চাইলে বান্দরবানের তুমব্রু এবং ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী ৩৪ ব্যাটেলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে সেটা হচ্ছে মিয়ানমার কাঁটাতারের বেড়াগুলো মেরামতের মাধ্যমে আরও মজবুত করছে। নতুন করে কোন কাঁটাতার আর বাড়াচ্ছে না বা তাদের সেটা আর বাড়ানোর সুযোগও নেই। এখন কাঁটাতারের বেড়া মেরামতের বিষয়টি তাদের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি কিংবা কৌশল হতে পারে। এটা রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকানোর জন্য করা হচ্ছে কি না সেটা আমার অবস্থান থেকে বলা মুশকিল।
তবে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গারা মনে করেন, তারা যাতে আর ফিরে যেতে না পারেন সেজন্যই কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। বেড়ার সঙ্গে বিদ্যুৎসংযোগও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে কথা হয় মংডুর তমবাজার এলাকা থেকে আসা সৈয়দুল ইসলামের সঙ্গে। তিনদিন আগে টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা সৈয়দুল বাংলানিউজকে বলেন, নতুন করে বেড়া দিচ্ছে। বেড়ার সঙ্গে বিদ্যুতের লাইনও লাগাচ্ছে।
ঘুমধুম সীমান্তের ঢেকিবুনিয়া থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন।
তবে বিজিবি লে.কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি জানার পর রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বিষয়টি পরীক্ষা করা হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। আর ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও নেই।
এদিকে মিয়ানমার স্থল সীমান্তপথে মাইন বসানোর কাজ এখনও অব্যাহত রেখেছে বলে তথ্য আছে বিজিবির কাছে। রোববার সকালে তমব্রু এলাকায় জিরো পয়েন্ট থেকে মিয়ানমারের ভেতরে গিয়ে ফেরার পথে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দলের তত্তাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
মিয়ানমার সীমান্তে এ পর্যন্ত মাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত এবং ১২ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন বিজিবি লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান।
গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা একযোগে হামলা চালায়। এর জের ধরে মিয়ানমারে ব্যাপক সহিংসতার মুখে পড়ে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। নির্যাতনের মুখে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে তারা দলে দলে ছুটে আসতে শুরু করেন বাংলাদেশে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
শৃঙ্খলা এনেছে সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪,২০১৭
আরডিজি/টিসি