এইচএসসি পরীক্ষায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফল প্রত্যাশিত মানের না হওয়া এবং পরবর্তী করণীয় শীর্ষক পর্যালোচনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পর্যালোচনা সভায় বিষয়গুলো ওঠে এসেছে।
এইচএসসির আইসিটি বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, আইসিটি বিষয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত কিছু বিষয় শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজবোধ্য হলেও মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন।
এইচএসসির ইংরেজি বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র তুলানামূলকভাবে জটিল হয়েছে।
পর্যালোচনা সভায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৫ জেলার ৯২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ ২৮০ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যাশিত ফলাফলের অন্তরায় হিসেবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ শিক্ষক স্বল্পতা, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব, প্রতিষ্ঠানের ক্লাশের চেয়ে কোচিংয়ের ক্লাসের প্রতি শিক্ষার্থীদের অধিক আগ্রহ, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অনুপস্থিতি ও ক্লাশ বিমুখিতার বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি পারিপাশ্বিক চাপে অনেক সময় নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম ফূরণ করাতে হয়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত ফল অর্জন সম্ভব হয়ে ওঠে না বলেও মত প্রকাশ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষক সংকটসহ সাতটি কারণে এবার এইচএসসিতে তুলনামূলকভাবে কাঙ্খিত ফলাফল হয়নি। বাস্তবতা মেনেই তো সামনের দিকে এগুতে হবে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি নিমিষেই সমাধান করা সম্ভবপর নয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এসব সমস্যা সমাধানে নিজেদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইসিটি বিষয়ে নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষক নিয়োগ করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কেননা, সরকারের আশায় বসে থাকলে তো হবে না। কখন এমপিও হবে, শিক্ষক নিয়োগ হবে, সেই অপেক্ষায় থাকলে তো হবে না। আর সরকারি পর্যায়ের কলেজগুলোতে সংকট নিরসনে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। আশা করি শিগগিরই এ সংকট নিরসনে কার্যক্রম শুরু হবে।
আইসিটি বিষয়টি বিজ্ঞানভিত্তিক জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে কোন সমস্যা পড়ছে না বিধায় ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া প্রয়োজন। তাই সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে আইসিটি বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে ক্লাস নেওয়ার জন্য আমি পরামর্শ দিয়েছি। বাধ্যতামূলক বিষয় হওয়ায় আলাদা সিলেবাস করারও সুযোগ নেই। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ উপযুক্ত ফোরামে বিষয়টি আমি একাধিকবার তুলেছি। এ বিষয়ের সিলেবাস পরিবর্তনে এখনো সুযোগ থাকার বিষয়টি আমি অবহিত করেছি। যেহেতু শুধু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আইসিটি পড়ছে না। তাই সুযোগ রয়েছে সহজীকরণের। আশা করি এ বিষয়ে কিছু পরিবর্তন হতে পারে। সমস্যা আছে সমস্যা থাকবে। এ বাস্তবতাকে মেনে যে যার অবস্থান থেকে সর্ব্বোচ্চ দেওয়ার ইচ্ছেটা থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসমূখী করতে প্রয়োজন অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে কাউন্সিলিং করতে হবে। ’
‘একজন শিক্ষক শুধু ৯-৫টার সময়ের শিক্ষক নন। তিনি প্রতিদিনের শিক্ষক, সারাজীবনের শিক্ষক। সুতরাং ওনাকে এ বোধটুকু নিজের মধ্যে আনতে হবে। ’ যোগ করেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
পর্যালোচনা সভায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সচিব প্রফেসর আবদুল মুবিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান ও কলেজ পরিদর্শক সুমন বড়ুয়া দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। শিক্ষার মান আরও তরান্বিত করতে এবং সংকট নিরসনে সকলকে একযোগে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এসবি/টিসি