ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নগরবাসীর প্রতি মেয়র আ জ ম নাছিরের খোলা চিঠি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
নগরবাসীর প্রতি মেয়র আ জ ম নাছিরের খোলা চিঠি আ জ ম নাছির উদ্দিন/ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: নগরীর সমস্যা, উন্নয়ন-অগ্রগতি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন এবং আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে নগরবাসীর প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো খোলা চিঠিতে মেয়র পূর্বের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে পরিশ্রম করছেন বলে উল্লেখ করেছেন। আগামী ৮ মাসের মধ্যে সফল বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে বলেও জানিয়েছেন।

পাঠকের জন্য মেয়রের খোলা চিঠি অবিকল তুলে ধরা হলো- ‘পূর্বের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক দায় মাথায় নিয়ে আমি আপনাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি। নির্বাচনকালীন সময়ে দেওয়া যেসব প্রতিশ্রুতি আমি উপস্থাপন করেছিলাম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে রাতদিন অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছি।

তবে আওতা বহির্ভূত নানা সংকট, আর্থিক দৈন্যতার কারণে একটু বিলম্বে হলেও ইনশাল্লাহ আগামী ৮ মাসের মধ্যেই আমার প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে।

প্রিয় নগরবাসী:

নগরী থেকে বিলবোর্ডের জঞ্জাল সরানোর পর এবার আপনাদের নিরাপদ চলাচলের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হকার ভাইদের সহযোগিতায় নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধান ও নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে ফুটপাতে সারাদিন ব্যবসার পরিবর্তে হকার ভাইরা বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত সময়ে পণ্য বিকিকিনি করবেন।

উন্নত বিশ্বের আদলে এ ব্যবসা চালু করা হয়েছে। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছি। প্রথমে এ নিয়ে নাগরিক সমাজে নেতিবাচক মনোভাব পরিলক্ষিত হলেও এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সেবকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এমন সহযোগিতার জন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আউটার স্টেডিয়াম নিয়ে অপপ্রচারের সীমা ছিল না। সারাবছর খেলার মাঠকে নানা মহল মেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও বৃহত্তর নাগরিক সমাজ এতে উপকৃত হয়নি। আমি আউটার স্টেডিয়ামকে আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও নান্দনিক সাজে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। নগরীর প্রখ্যাত স্থপতি ও প্রকৌশলীরা এ নিয়ে কাজ করছেন।

আমাদের এই প্রিয় শহরকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে সকল প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে যেসব সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে (যদি বৃষ্টি না হয়) সম্পূর্ণ সংস্কার করে আপনাদের নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করবো। তবে সিডিএ কর্তৃক নির্মাণাধীন উড়াল সেতুর কারণে লালখান বাজার থেকে বহদ্দারহাট হয়ে আরাকান রোড পেপসি পর্যন্ত, বায়েজিদ বোস্তামি রোডের দুই নম্বর গেইট থেকে বেবি সুপার মার্কেট পর্যন্ত সড়ক পথ এবং বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক পথটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় আমি তাতে সংস্কার কাজে হাত দিতে পারছি না। তবে আপনাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সংস্কারের আহবান জানিয়েছি।

আপনাদের অবগতির জন্য আরো জানাতে চাই, শুধু সড়ক সংস্কার নয়, সড়কগুলোর দু’পাশে ফুটপাত নির্মাণ এবং আইল্যান্ডগুলোও নান্দনিক ভাবে সাজানো হবে। এয়ারপোর্ট রোডটি চারলেন বিশিষ্ট আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে গবেষণা করে নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে।

প্রিয় নগরবাসী:

সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বাসা বেঁধেছে তা নিরসনে কাজ করছি। নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করতে সক্ষম হয় সে লক্ষ্যে আগামী জানুয়ারিতে ব্যাপক সংস্কারে হাত দেব। এ লক্ষ্যে অনুসন্ধান কাজ চলছে।

গৃহকর নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে নগরবাসীর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। মূলত সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমার নিজস্ব কোন এখতেয়ার নেই।   অতীতে যেভাবে গৃহকর আদায় করা হয়েছিল তা সঠিক ছিল না। তারপরও করের অংক বেশি মনে হলে আপিল করার সুযোগ আছে।

আপনাদের অবগতির জন্য আরো জানাতে চাই, নগরীর সব সড়কে এলইডি লাইট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরী এ কর্মসূচির আওতায় চলে আসবে। নগরীর সব অলিগলি পাকাকরণের কাজ চলছে। নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের সেবকরা নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন, আমি অনাকাঙ্খিত একটি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে নিজ বাসায় শয্যাশায়ী। তারপরও সেবা যাতে কোন ভাবে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসায় ডেকে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উদার সহযোগিতা এবং মাননীয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছে। আপনাদের দোয়া এবং আশীর্বাদ নিয়ে আমি এ নগরীকে সবুজ, বাসযোগ্য এবং নিরাপদ একটি জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।