সভায় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, সিদ্ধান্তহীনতা, সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারা এবং কাজের গুরুত্ব বিচেনায় ব্যর্থতার কারণে বন্দরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, বন্দরে যেহারে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সে অনুযায়ী সক্ষমতা বাড়েনি।
এজন্য আগের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করে তারা বলেন, বন্দরে আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোন নেননি।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো.আবদুস সামাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গত সপ্তাহে নৌ-সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন তিনি। এ উপলক্ষে বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
বিগত ১০ বছরে বন্দরে নতুন কোন ইয়ার্ড তৈরি হয়নি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। একই অবস্থা যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও।
বন্দরের অপারেশনাল বোর্ডকে ক্ষমতায়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আর কি আছে। তারপরও এর উন্নয়ন হচ্ছে না। কারণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকতে হয়। সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারার কারণে বন্দরের এ অবস্থা।
চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বন্দরের উন্নয়ন কিভাবে দ্রুত করা যায় সে পন্থা বের করতে হবে। কারণ বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে সঠিক সময়ে পণ্য আনতে পারছি না।
বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনাল দ্রুত নির্মাণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল কবে হবে সেটা আমাদের জানালে উপকৃত হব। কারণ আমরা চাই এটি হোক।
প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী বন্দরের সক্ষমতা বাড়েনি অভিযোগ করে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস(বিকডা) সভাপতি নুরুল খাইয়ুম খান বলেন, কেন বাড়েনি সেটা আমরা জানি না। সমস্যা সমাধান করতে না পারায় প্রবৃদ্ধি মোকাবেলা করতে পারছে না।
বন্দর ও অর্থনীতির স্বার্থে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দরের যে কোন একটি সংস্থা কাজ না করলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
আগের প্রশাসন বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেনি আভিযোগ করে বিজিএমইএ পরিচালক মাহবুব চৌধুরী বলেন, বিগত ১০ বছরেও এনসিটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন বসেনি। আগের বোর্ড কি করেছে। সব বোঝা এখন বর্তমান বোর্ডের উপর এসে পড়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো আইন মানছেনা অভিযোগ করে তিনি বলেন, আইন না মানার কারণে বন্দরে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আইন অনুযায়ী শিপিং এজেন্ট নিজ খরচে কন্টেইনার অফডকে পাঠাবে। কিন্তু তা কেউ মানছে না।
বন্দরে কন্টেইনার জট কমাতে হলে যন্ত্র পরিচালকদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বখশিশ’ ছাড়া কেউ কাজ করে না। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে ফর্কলিফট চালককে দেড় হাজার টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে তিনি কন্টেইনার তুলছেন না।
নিজেদের স্বার্থে যে কোন একটি সংস্থা চাইলেই বন্দর অচল করে দেয় মন্তব্য করে বিকেএমইএ’র সাবেক পরিচালক শওকত ওসমান বলেন, এজন্য সমস্যা সমাধানে একটি কমিটি গঠন প্রয়োজন। কমিটি সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় সম্পদ। এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তাও। তাই এটাকে ব্যবহার করে কেউ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইলে সেটা জাতীয়ভাবে মোকাবেলা হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন চেম্বরের সভাপতি খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস(বিকডা) সভাপতি নুরুল খাইয়ুম খান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিজিএমইএ পরিচালক মাহবুব চৌধুরী, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের আমিরুল ইসলাম চৌধুরী মিজান, বার্থ অপাটের অ্যাসোসিয়েশনের ফজলে ইকরাম, বিকেএমইএ এর সাবেক সভাপতি শওকত ওসমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এমইউ/টিসি