তবে দুজনেই বেঁচে আছেন। শুক্রবার একটি ত্রাণের লাইন মিলিয়ে দিল একে অপরকে হারিয়ে ফেলা এই রোহিঙ্গা মা-মেয়েকে।
এদিন অন্যদের সঙ্গে ত্রাণ নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিল ক্ষুধায় বিধ্বস্ত ক্লান্ত শ্রান্ত দুটি মুখ। আচমকা দেখে পেতেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়লেন কান্নায়।
মা ও মেয়ের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করার দুটি ছবি শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছেন আবদুস সামাদ শিকদার।
ছবি দুটির উপরে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘ ত্রাণ বিতরণের সময় একটি মর্মস্পর্শী দৃশ্য অবলোকন করলাম। লাইনে দাঁড়ানো দুই নারী দেখলাম পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এরা মা আর মেয়ে। মিয়ানমার থেকে যে যার মত এসেছে। দুজনের মধ্যে এতদিন কোনো যোগাযোগ ছিল না। ত্রাণের লাইনে দেখা হলো দুজনের। তারা কান্না ধরে রাখতে পারেননি। ’
১০ সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংযুক্ত হন আবদুস সামাদ শিকদার।
এরপর থেকে রোহিঙ্গা সংকটে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দিনভর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ দেওয়াসহ নানা অভিজ্ঞতার ঝুলি ফেসবুকে তুলে ধরছেন দিনশেষে। শুক্রবার রাতে সময় না হওয়ায় এদিনের অভিজ্ঞতা তিনি সবার সঙ্গে শেয়ার করেন পরদিন সকালে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ফোনে যোগাযোগ করা হলে আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আমার পয়েন্ট থেকে শুক্রবার প্রায় সাড়ে চারহাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এই ত্রাণ বিতরণ করার সময় হঠাৎ দেখলাম দুজন নারী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। কারণ জানতে গিয়ে পেলাম তারা মা মেয়ে। এতদিন একজন আরেকজনের হদিস পাচ্ছিলেন না। তারা ভিন্নভাবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ’
তবে এই দুজন নারীর নাম ও তাদের বাড়ি রাখাইনের কোথায় এবং তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
এদিকে আবদুস সামাদ শিকদারের ফেসবুকে দেওয়া মা-মেয়ের কান্নার ছবিগুলো কাঁদিয়েছে অনেককেই। এই ছবির নিচে তালহা জোবায়ের সজিব নামের একজন কমেন্ট করেছেন ‘মা- মেয়ে এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ’।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান মা-মেয়ের কান্নার এই দুটি ছবি শেয়ার করে লিখলেন-‘মা-মেয়ের দৃশ্যটা শেয়ার করলাম। একই সাথে আনন্দ আর বেদনার। ’
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে স্বজন-ঘরবাড়ি হারানোর এমন কষ্টের দিনগুলোতেও মা-মেয়ের এই পুনর্মিলন সত্যিই যেনো অনেক দামি, বড় আনন্দের। হোক না শরণার্থী ক্যাম্পেই এখন তাদের উদ্বাস্তু জীবন !
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
টিএইচ/টিসি