ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভক্সওয়াগন এমিও কাপে সাড়া জাগালেন যে বাংলাদেশি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ভক্সওয়াগন এমিও কাপে সাড়া জাগালেন যে বাংলাদেশি কার রেসিংয়ে বিশ্বজয় করতে চান আফফান সাদাত।

চট্টগ্রাম: ব্যয়বহুল কার রেসিংয়ে বিশ্বে প্রথম যে বাংলাদেশি তরুণ সাফল্যের দেখা পেয়েছেন তিনি আফফান সাদাত। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভারতের চেন্নাই ও কোয়েনবাটরে অনুষ্ঠিত ভক্সওয়াগন এমিও কাপে তৃতীয় স্থান এবং জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রানার আপ হয়েছেন তিনি।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে ফিরেই মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। বললেন, এ প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন ফি দিতে হয়েছে ১২ লাখ রুপি।

আড়াই লাখ রুপি দিতে হয়েছে সিকিউরিটি ডিপোজিট। ২ লাখ ৫৫ হাজার রুপি দিতে হয়েছে ইউনিফর্ম, হেলমেটসহ বিভিন্ন উপকরণ খাতে।
অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত। কারণ আমি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পোর্ডিয়ামে (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়) স্থান করে নিতে পেরেছি। আগামী দিনে বিশ্ব জয় করতে চাই।

তিনি বলেন, ভক্সওয়াগন এমিও কাপ ২০১৭ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন ভারতের দিল্লির বাসিন্দা কারমিন্দার সিং, দ্বিতীয় হয়েছেন ভারতের চেন্নাইয়ের বাসিন্দা সন্দ্বীপ কুমার। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও চীন থেকে মোট ২১ জন প্রতিযোগী এ রেসিংয়ে অংশ নেন। আফফানের পাশাপাশি তৌহিদ আনোয়ার নামে ঢাকার অপর এক বাংলাদেশিও অংশ নেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ এ খেলার আয়োজন করে।

আফফান জানান, চেন্নাইয়ে তাদের রেসিং ট্র্যাকটি ছিল ৩ দশমিক ৭৬২ কিলোমিটার। ওই ট্র্যাকে ছিল আটটি ল্যাপ। একটি ল্যাপ পার হতে আফফান সময় নিয়েছেন ১ দশমিক ৫৯ সেকেন্ড। সোজা রাস্তায় তিনি গাড়ি চালিয়েছেন ১৯০ কিলোমিটার স্পিডে, টার্নিং গতি নামিয়ে আনতে হয়েছে ১১০ কিলোমিটার স্পিডে।

আফফানের বাবা মিকাইল সাদাত শরিফুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদর এলাকায় হলেও ১৯৯৫ সাল থেকে তারা বসবাস করছেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ডিওএইচ এলাকায়।

আফফানের বাবা মিকাইল সাদাত শরিফুল ইসলাম ওরফে স্বরূপ জানান, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো শেখার জন্য আফফানের কোনো প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হয়নি। চট্টগ্রামের ডিওএইচ এলাকায় বাড়ির আশপাশের রাস্তায় দ্রুতগতির গাড়ি চালানো শিখেছে আফফান। সে পাঁচ বছর বয়স থেকে আমার কোলে বসে গাড়ি চালানো কৌশল রপ্ত করেছে।

আফফানের মা লায়লা বেগম বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিযোগিতায় ছেলের অংশগ্রহণে প্রথম প্রথম খুব ভয় হতো। ছেলেটা যতক্ষণ ট্রাকে থাকত ততক্ষণ খুব উদ্বিগ্ন থাকতাম। অনেকে তো অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য পায়। কার রেসিং জগতে আমার ছেলের সাফল্যে আমি গর্বিত। ‘ আফফানের সাফল্যের কথা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে তুলে ধরারও আহবান জানান লায়লা।

এক প্রশ্নের উত্তরে আফফান বলেন, ‘ভক্সওয়াগন এমিও কাপে এবার তৃতীয় স্থান অধিকার করেছি। আগামীতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। এছাড়া আমার চূড়ান্ত টার্গেট লন্ডনে অনুষ্ঠিত এফ-১ (ফর্মুলা-ওয়ান) এ অংশ নেওয়া। এ জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। ’ 

সাফল্যগাথা এখানেই শেষ নয়, এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের বিখ্যাত কার রেসিং ‘ভল্কস ওয়াগন ভেনটোকাপ-২০১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ’ প্রতিযোগিতায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছিল আফফান সাদাত। ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের দিল্লিতে এ কার রেসিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে চতুর্থ স্থান এবং চূড়ান্ত পর্বে ২০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিল আফফান সাদাত। এ কারণে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া কোনো পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি ‘ভল্কস ওয়াগন এমিও কাপ-২০১৭ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছেন সাদাত।

দিল্লির ‘বুড ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট’ নামের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ট্র্যাকে এ কার রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই ট্র্যাকে ছিল ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ মোড়। প্রায় দেড় লাখ দর্শক ওই কার রেস উপভোগ করেছিল। এর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘থার্ড র‌্যালিক্রস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬’ প্রতিযোগিতায় নোভাইস (ফাস্র্ট টাইমারস) গ্রুপে অংশ নেন আফফান। মাত্র ৪৯ দশমিক ৪০৭ সেকেন্ডে লক্ষ্যে পৌঁছেন তিনি।  

আফফান জানান, ছোটবেলা থেকেই গাড়ি চালনার প্রতি নেশা ছিল তার। রেসিং নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন বিস্তর। তিনি চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। ভর্তি হতে চান ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোতে।  

আফফান জানান,  যখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন থেকে তাকে গাড়ি চালনা শিখিয়েছেন বাবা। যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে তখন সে পুরো দস্তুর একজন কারচালক। এসএসসি পরীক্ষা শেষে ২০১৪ সালে বাবাকে নিয়ে আফফান পাড়ি দেন লন্ডনে। প্রবল উৎসাহ নিয়ে সে ভর্তি হয় লন্ডনের ‘অ্যাসেসিয়েশন অব রেসিং ড্রাইভিং স্কুলে’। বেশ শুরু করল ‘গো কার্ট’ অনুশীলন। লন্ডনের বিভিন্ন ট্র্যাকে ছোটাছুটি করেন ‘কারটিং’ (ছোট্ট যান) নিয়ে। একসময় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘ব্র্যা-হ্যাচ’ ট্র্যাকে অনুশীলন শেষে পেয়ে যান রেসিং (ফর্মূলা-৪) এর আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স। ইতিপূর্বে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ফর্মুলা-ওয়ান রেসার হিসেবে লন্ডনের মাঠে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন আফফান।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭

এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।