জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া মুন ইমনের মরদেহ তার ভাই ইরফানুল করিম রিমনের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া মুন ও কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) জাহেদুল কবিরের উপস্থিতিতে কবর থেকে ইমনের মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
তানিয়া মুন বাংলানিউজকে জানান, আদালতের নির্দেশনায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা পশ্চিম রাউজান পৌরসভার রেজাউল করিমের ছেলে ইমরানুল করিম ইমনের মরদেহ তোলা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর তার ছোট ভাই ইরফানুল করিমকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইমনের ছোট ভাই ইরফানুল করিম রিমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাউজানে আমাদের পাশের গ্রামেই অমিত মুহুরীর বাড়ি। বাল্যকাল থেকেই আমার ভাইয়ের সাথে অমিতের বন্ধুত্ব। কী কারণে আমার বড় ভাইকে এভাবে নৃশংসভাবে খুন করল তা আমাদের অজানা। আমি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
ছয় মাস আগে বাবা স্ট্রোক করার কথা জানিয়ে ইমনের ছোট ভাই ইরফানুল করিম আরও বলেন, ‘বাবা স্ট্রোক করার পর থেকে সংসার চালাতেন বড় ভাই ইমন। কেননা, বাবা আগে গাছের ব্যবসা করলেও স্ট্রোক করার পর থেকে বিছানায় শয্যাশায়ী। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ভাইকে মেরে ফেলায় আমরা খুব কষ্টে পড়ে গেছি। ’ কান্নায় ভেঙে পড়েন করিম।
এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড এনায়েতবাজারের কাউন্সিলর সেলিমুল্লাহ বাচ্চু, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার এসআই মো. হারুন অর রশিদ, রাউজান থেকে মরদেহ নিতে আসা ইমনের চাচাতো ভাই ইয়াছিন মাহমুদ, নাঈম, তানভিরসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ আগস্ট নগরীর কোতয়ালী থানার এনায়েতবাজারে রাণীরদীঘি থেকে ড্রামভর্তি একটি প্রায় গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের কোন পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ১৬ আগস্ট নগরীর চৈতন্যগলির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
১৭ দিন অনুসন্ধানের পর মরদেহের পরিচয় এবং লৌমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়া অমিত মুহুরীকে (৩০) ২ সেপ্টেম্বর রাতে কুমিল্লা সদর উপজেলায় আদর নামে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে ৩০ আগস্ট রাতে গ্রেফতার করা হয় অমিতের বন্ধু শিশির (২৭) এবং তার বাসার নিরাপত্তারক্ষী শফিকুর রহমান শফিকে (৪৬)। ১ সেপ্টেম্বর শিশির আদালতে জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে অমিত মুহুরী হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
১১ সেপ্টেম্বর ইমনের মরদেহ চৈতন্য গলির কবরস্থান থেকে উত্তোলন করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য আদালতে আবেদন করেন তার ভাই ইরফানুল করিম। মানবিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
পরে ১৩ সেপ্টেম্বর ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে মরদেহ উত্তোলনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন কোতয়ালী থানার এসআই মো. হারুন অর রশিদ। আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ উত্তোলনের সময় উপস্থিত থাকার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া মুনকে নিয়োগ দেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মমিনুর রশিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এসবি/আইএসএ/টিসি