চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ইউছুফ নবী (২৫) বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।
মিয়ানমারের মংডু এলাকার মো. শফি ও দিলদার বেগমের বড় ছেলে ইউছুফ।
মিয়ানমার ও বান্দরবানের ঘুনধুম সীমান্তে গত ১০ সেপ্টেম্বর স্থলমাইন বিস্ফোরণে ইউছুফের দুই পা উড়ে গেছে। পরবর্তীতে স্বজনদের মাধ্যমে ঘুনধুম সীমান্ত হয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউছুফ নবী বলেন, ‘মিলিটারিরা আমাদের পাড়ায় এসে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করে। প্রাণে বাঁচতে আমরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আসি। পাহাড় বেয়ে ৪ দিন হেঁটে বাংলাদেশের ঘুনধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টে পৌঁছি। বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় তখন এলাকার অনেকেই ছিল। পরক্ষণে খবর পেলাম আমার ছোটভাই পালিয়ে আসার সময় মিলিটারিরা বোমা ছুঁড়ে মেরে ফেলেছে। খবর শুনেই আমি ভাইয়ের খোঁজে আবারও বার্মার দিকে ছুটে যাই। তখন বার্মার মিলিটারির পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণের শিকার হই। ’
‘পরবর্তীতে পাড়ার লোকেরা আমাকে কাঁধে করে ঘুনধুম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখান থেকে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে আমাকে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখানে অপারেশন করে আমার দুই পা কেটে ফেলা হয়েছে। চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। বিস্ফোরণে ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে। ’
ঘুনধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এসে মাকে আগেই বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ইউছুফ। তবে মা এখন কোথায় আছে তা জানেন না ইউছুফ নিজেও। ভাইকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই স্থলমাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত ইউছুফ হারিয়েছেন দুই পা, ডান হাত ও দুই চোখ। চলাফেরাও করতে পারছেন না। চোখেও দেখতে পাচ্ছেন না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইউছুফ বলেন, ‘ভাই আর আম্মুর খবর নিতে হবে। ওরা বেঁচে আছে কিনা জানি না। আমি চোখে দেখতে চাই, হাঁটতে চাই। ’
জেলা পুলিশের মেডিকেল টিম-১ এর এএসআই আলাউদ্দিন মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, মাইন বিস্ফোরণে আহত ইউছুফকে সপ্তাহখানেক আগে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দিচ্ছেন। তাকে দেখার কেউ নেই। সারাদিন ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। তার হাতে ও পায়ে অপারেশন হয়েছে। দুই পা কেটে ফেলা হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এসবি/আইএসএ/টিসি