ছয়দিন আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে সানজিদার মৃত্যু হয়েছে। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই মা হারা নূর সাহেলা।
মায়ের বুকের পরশ, বুকের দুধ, পরিচর্যা, মায়ের মমতা-নূর সাহেলার এতো অভাব তার বাবা কিভাবে পূরণ করবেন? তবুও চেষ্টার কমতি নেই আব্দুর রহমানের। মেয়েকে বুকে আগলে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। প্রাণের সন্তানকে বাঁচাতে পারবেন কি না সন্দিহান, তবুও বুকের মধ্যে আগলে ঘুরছেন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আব্দুর রহমানকে দেখা যায় উখিয়ার থাইংখালী এলাকায়। জড়ো হওয়া রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে সদ্যোজাত সন্তানের মা খুঁজছেন নিজের মেয়েকে একটু বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য। তার এই অনুরোধে অবশ্য ‘না’ বলছেন না কেউই। এক মায়ের মৃত্যুর পর নূর সাহেলা যেন খুঁজে পেয়েছে আরও অনেক মা।
আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ছয়দিন আগে রাতে এসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের পাড়ায় কয়েকটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় আব্দুর রহমান তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে পালানোর জন্য বের হন। এলোপাতাড়ি গুলিতে তার স্ত্রী ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন।
ঘটনাস্থলে মারা যাওয়া সানজিদাকে পরদিন ভোরে আব্দুর রহমানসহ মাত্র চারজন মিলে জানাজা পড়ে দাফন করেন। এরপর মেয়েকে নিয়ে আব্দুর রহমান বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সোমবার রাতে আব্দুর রহমান টেকনাফে এসে পৌঁছান।
‘আমার কোন সমস্যা নেই। শুধু মেয়েটা সারাক্ষণ কাঁদে। দুধের তৃঞ্চা যখন পায় তখন আরও বেশি কাঁদে। আমি কোলে নিয়ে কতক্ষণ রাখতে পারি। ’ বলেন আব্দুর রহমান
আব্দুর রহমানের কোলে নূর সাহেলার অবয়বটি দেখা যায়, নিষ্পাপ এক দেবশিশু! চেহারা দেখেই বোঝা যায় তৃষ্ণায় কাতর। কাঁদছে তো কাঁদছেই। তবে কান্নার শক্তিও যেন তেমন নেই। কাঁদতে গিয়ে যেটা হচ্ছে সেটা ছটফট করার মতোই। মা হারানোর অব্যক্ত যন্ত্রণা।
তিনি জানান, ঘটনার দিন তাদের পাড়ায় সানজিদাসহ ১২ জনকে খুন করা হয়। এদের কাউকে কাউকে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হয়েছে। কাউকে জানাজা ছাড়াই দাফন করে তড়িঘড়ি করে স্বজনরা চলে এসেছেন বাংলাদেশে।
নূর সাহেলার তবু বাবা আছে, কিন্তু তার মতো অনেক শিশু আছে যারা মা-বাবা, ভাইবোন, স্বজন সবাইকে হারিয়েছেন। মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে এই দুনিয়ায় তারা একা, একদম একা।
শুধু শিশু নয়, শিশু-বৃদ্ধ, আবাল-বণিতা সবাই কাউকে না কাউকে হারিয়েছেন। উখিয়া-টেকনাফের বাতাসে তাই এখন অসহায় রোহিঙ্গাদের স্বজন হারানোর দীর্ঘশ্বাস ।
গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারে সেনাচৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর চলে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহনীর অকথ্য নির্যাতন। এর প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। জাতিসংঘের হিসেবে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সোয়া তিন লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি
**আরও পড়ুন
ত্রাণের আশায় ছুটে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুরা
হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা
ধানখেতে পড়ে ছিলেন তসলিমা, বুকে দুই সন্তানের নিথর দেহ
এত রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যৎ কি ?
মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা
পথে পথে তল্লাশি, রোহিঙ্গাদের সতর্কে মাইকিং
রোহিঙ্গাঢলে হুমকির মুখে পর্যটন শিল্প
কত রোহিঙ্গা এসেছে, সঠিক হিসেব নেই কারো কাছে
সক্রিয় দালালচক্র, পুঁজি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ
রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ৪ চেকপোস্ট
পাহাড়-বন দখল করে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের বসতি
‘ওপারে বাদশা ছিলাম, এপারে ফকির হলাম’
মঙ্গলবারের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের মায়ানমার ছাড়ার আলটিমেটাম
স্ত্রীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে স্বামীরা