মিয়ানমারের মংডু জেলার ঘরাখালী থেকে আসা শফিকুর রহমান (১০) উখিয়ার বালুখালী এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে গিয়ে ওই ত্রাণবাহী গাড়ির নিচে চাপা পড়ে। শফিকুরের ডান পা ভেঙ্গে গেছে।
মিয়ানমারের তমব্রু বলগজি এলাকা থেকে আসা সাকের (১২) পা ভেঙ্গেছে উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় ত্রাণ নিতে গিয়ে সড়কে সিএনজি অটোরিকশার চাপায়।
ত্রাণের আশায় ছুটে গিয়ে গাড়িচাপা পড়ে অথবা হুড়োহুড়িতে আহত হয়ে অনেক শিশুই এখন কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রাণ নিয়ে প্রতিদিন আসছে অনেকে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সংগঠন তো আছেই, ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও আসছে ত্রাণ। তবে হাতেগোনা কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ছাড়া কেউই সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ করছে না বলে অভিযোগ আছে।
এই অবস্থায় সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কেউ ত্রাণ দিতে চাইলে প্রশাসনকে অবহিত করার মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। উখিয়ায় ত্রাণবাহী গাড়ির জন্য চেকপোস্টও খোলা হয়েছে।
তবুও প্রশাসনের নজরদারির ফাঁক গলে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার লাগানো ত্রাণবাহী গাড়ি। কেউ চিড়া-মুড়ি-বিস্কুট, কেউ চাল-ডাল, কেউ পোশাক-মশারি-বোরকা এসব নিয়ে আসছেন।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণের কারণে গাড়ি দেখলেই এগিয়ে আসে শত শত ক্ষুধার্ত হাত যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এছাড়া ত্রাণ বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন আছে।
উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালংসহ বিভিন্ন স্পটে গিয়ে দেখা গেছে, শুকতারা ক্লাব, সাতকানিয়া থেকে সূর্তরুণ ক্লাব, আহলে হাদিস আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন-এই ধরনের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আসছে ত্রাণবাহী ট্রাক-পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস। ট্রাক-পিকআপ ভ্যান সড়কে যাবার সময় জটলা দেখে ছুঁড়ে মারছে বিস্কুট, চিড়া-মুড়িসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ও পোশাক। ছুঁড়ে মারা সেই পণ্য হুড়োহুড়ি করে কেউ নিতে পারছে আর কেউ ব্যর্থ হয়ে ফেরত যাচ্ছে। আবার হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে মারামারিও লেগে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে।
মিয়ানমারের মংডু জেলার বড়ছড়া থেকে আসা কবির আহমদ সোমবার টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার ছেলে হাফেজ আহমেদ (১৬) টেকনাফে ঢুকেই ত্রাণ নিতে গিয়ে অটোরিকশার চাপায় কোমরে, হাতে, পা ও মাথায় চোট পেয়েছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা কবির বাংলানিউজকে বলেন, চারদিন ধরে হেঁটে আসছি। ছেলেটা ক্ষুধার্ত ছিল। সেজন্য রিলিফের গাড়ি দেখে দৌড়াই গেল। এভাবে আহত হবে সে জানতো না।
কক্সবাজার সদরে বেসরকারি ডিজিটাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে মিয়ানমারের তমব্রু জেলার ওয়াহাব পাড়া থেকে আসা এমরান হাশিম (৯)। এমরানের বড় বোন সাবেকুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, ৫দিন আগে এসেছি। রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়েছে দেখে আমার ভাইটা সেখানে গিয়েছিল। ত্রাণ তো পায়নি, উল্টো সিএনজি অটোরিকশার চাপায় ডান পা-টা ভেঙে গেছে।
সূত্রমতে, ত্রাণ নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত শতাধিক শিশু আহত হয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও ডিজিটাল হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়েছে অনেক শিশু।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে সম্প্রতি উখিয়ার কুতুপালং এলাকা পরিদর্শন করেন কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ। গাড়ি থেকে ছুঁড়ে ত্রাণ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই উন্নয়ন কর্মকর্তা।
‘শরণার্থীদের গাড়ি থেকে ছুঁড়ে ত্রাণ দেওয়ার বিষয়টি খুবই অমানবিক। এটা কি কোন পশুপাখিকে খাবার দেওয়া হচ্ছে ? একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে যখন পশুপাখির মতো ছুঁড়ে খাবার দেওয়া হয়, তাতে কতটুকু সহানুভূতি আর মানবতা থাকে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। ’ বলেন জেমস গোমেজ
এদিকে অধিকাংশ ত্রাণবাহী গাড়ি থেকেই পোশাক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ময়লা-ছেঁড়া কাপড়চোপড়। রোহিঙ্গারা এসব পোশাক কেউ নিচ্ছেন, কেউ নিচ্ছেন না। অধিকাংশ পোশাকই সড়কের ওপর ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়ার আমতল থেকে বালুখালী পর্যন্ত সড়কজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ত্রাণ হিসেবে দেওয়া পোশাক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি
হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা
ধানখেতে পড়ে ছিলেন তসলিমা, বুকে দুই সন্তানের নিথর দেহ
এত রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যৎ কি ?
মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা
পথে পথে তল্লাশি, রোহিঙ্গাদের সতর্কে মাইকিং
রোহিঙ্গাঢলে হুমকির মুখে পর্যটন শিল্প
কত রোহিঙ্গা এসেছে, সঠিক হিসেব নেই কারো কাছে
সক্রিয় দালালচক্র, পুঁজি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ
রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ৪ চেকপোস্ট
পাহাড়-বন দখল করে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের বসতি
‘ওপারে বাদশা ছিলাম, এপারে ফকির হলাম’
মঙ্গলবারের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের মায়ানমার ছাড়ার আলটিমেটাম
স্ত্রীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে স্বামীরা