বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বন্দর ভবনের নিচতলায় ‘ভিজিটরস এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম’ চালু হওয়ার পর ভোগান্তির মুখে পড়েন শিপিং এজেন্টস’র কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, বন্দরের জলসীমায় পণ্যবাহী জাহাজ কখন আসবে তা ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন তাদের বন্দর ভবনে যেতে হয়।
এদিকে প্রথমদিন বাধা পেয়ে বিক্ষোভ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারিত বার্থিং সভা বর্জন করেন শিপিং এজেন্ট কর্মকর্তারা। পরে আগের নিয়মে বন্দরে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সবসময় সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টা বন্দর-কাস্টমস সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু বন্দরের সিদ্ধান্ত এ নির্দেশনার ব্যত্যয়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান ব্যবহারকারী আমরা(শিপিং এজেন্ট কর্মকর্তারা)। নানা কাজে বন্দরে যেতে হয়। আমাদের এত প্রসিডিউর মানতে হবে কেন। বন্দরের এ সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য একটি বাধা।
বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেদের সুরক্ষিত করতে এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটি নতুন একটি পদ্ধতি। সবার কাছে পরিচিত হতে সময় লাগবে। বন্দর ব্যবহারকারীদের বিষয়টি আমরা দেখছি। এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) লে.কর্নেল আবদুল গাফফারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির আওতায় কোনো ব্যবহারকারী বন্দর ভবনে ঢুকতে হলে প্রথমে বন্দর ভবনের নিচতলায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে ক্রম অনুযায়ী নাম তালিকাভুক্তি করতে হবে। যেমন, খাতায় নিজের নাম, ঠিকানা, কার কাছে সাক্ষাত করবেন, কী বিষয়ে সাক্ষাত করবেন তা বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে।
এরপর দর্শনার্থী যার সাথে সাক্ষাত করবেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুমতি আদায় করবেন বন্দর কর্মীরা। এরপর অনুমতিপত্র পাঠাতে হবে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে। এই অনুমতিপত্র পেতে যত দেরি হবে দর্শনার্থীকে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
জানা গেছে, শিপিং এজেন্টস কর্মকর্তারা প্রতিদিন বন্দর ভবনে যেতে হয়। সেবা পেতে এভাবে প্রতিদিন নাম, পরিচয় লেখার পরও অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে সময়ক্ষেপনের কারণে তারা ক্ষুদ্ধ হন। শিপিং এজেন্টস কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে সাময়িকভাবে এই পদ্ধতি শিথিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ড হল সংরক্ষিত এলাকা। সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ব্যবহারকারীদের পরিচিত কার্ড দেওয়া হয়। সেই কার্ড ব্যবহার করে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করে পণ্য খালাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম করেন ব্যবহারকারীরা। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী জেটি ও ইয়ার্ড এলাকায় নিরাপত্তা তদারকি রাখতে হয়।
বন্দর ভবন স্পর্শকাতর স্থান নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, এখানে মূলত প্রশাসনিক ও পরিচালন কার্যক্রম সম্পর্কিত নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন্দর ভবনের পাশে অত্যাধুনিক রেস্তোরাও রয়েছে। আছে একটি ব্যাংকের কার্যালয়ও। ব্যবহারকারীদের সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যা হলে বন্দর ভবনে যেতে হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল বশর বাংলানিউজকে বলেন, বন্দর ভবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহারকারীদের যেতে হয়। তারা যদি ইজিলি যাতায়াত করতে না পারে সেক্ষেত্রে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হবে। বন্দর ব্যবহারকারীদের প্রবেশে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়।
ব্যবহারকারীরা জানান, উন্নত বিশ্বের বন্দরগুলোতে ব্যবহারকারীদের বন্দরের কার্যালয়ে গিয়ে সেবা নিতে হয় না। কারণ সেখানে অফিসে বসে ব্যবহারকারীরা সেবা পান। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এখনো পুরোপুরি অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়নি। ছয় বছর আগে কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হওয়ার পর বার্থিং সভায় আসতে হবে না বলে উদ্যোগ নিয়েছিল বন্দর। এটি এখনো অনলাইনভিত্তিক হয়নি।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড কাস্টমস) বাংলানিউজকে বলেন, এভাবে দূরত্ব তৈরি কারও জন্যই মঙ্গল হবে না বরং জটিলতা বাড়াবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে বন্দরের বেরিয়ে আসা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এমইউ/টিসি