ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আবার যুদ্ধে যাব’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
‘আবার যুদ্ধে যাব’ হাসপাতালে আবদুল্লাহ। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার থেকে: মিয়ানমারের ভুচিদং থানার টমবাজার এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে আবদুল্লাহ। ২২ বছর বয়সী আবদুল্লাহ তার ভাষায়, ‘টমবাজার হাইস্কুলের ৯ ক্লাসের ছাত্র।’ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে গিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে এসেছেন। আবদুল্লাহর ইচ্ছা, সুস্থ হলে আবারও ফিরে যাবেন মিয়ানমারে। যুদ্ধ করে তাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নেবেন।

আবদুল্লাহ নিজেই জানিয়েছেন, দুই বছর আগে তিনি মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মিতে (আরসা) যোগ দেন। আরসা নেতা আয়াতুল্লাহ তাকে টমবাজারে তাদের পাড়ার জমাদার (নেতা) করেছেন।



গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ কক্সবাজারের টেকনাফে ঢোকার পর জাতিসংঘের মেডিসিন স্যঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) টিম তাকে উদ্ধার করে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে কক্সবাজার সদরে বেসরকারি কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সেখানেও এমএসএফ’র তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন আবদুল্লাহ।

আবদুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, গত ২৩ আগস্ট টমবাজারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর বার্মিজদের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে সাত রোহিঙ্গা যুবক, যাদের সবাই আরসা সদস্য। এদের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। আবদুল্লাহসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পাঁচজনই বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে তিনি জানান।

‘আঁরা আতজন গেইলাম যুদ্ধ গরিবার লাই। পাড়ার মধ্যে মিলিটারি গিইল্যেদে অ্যান্ডে বোম বোয়াইয়েরে একবারে চাল্লিশজন মারি ফালাইয়্যি। আঁরার একজন শহীদ হই গেইয়্যে। আরেকজনরে মিলিটার ঘাই লই গিয়েগুই। পাঁচজন বাঁচি গেইগুই। ইতারার লই আর হারিত ন পারি। আর যুদ্ধ গরিত ন পারি। বেশাবেশি ফায়ার গইরয্যে। পরে আঁরা আই গেইগুই। ’ (আমরা সাতজন গিয়েছিলাম যুদ্ধ করতে। পাড়ার মধ্যে যখন মিলিটারি আসল, আমরা বোমা পুঁতে একসঙ্গে ৪০ জনকে মেরে ফেলেছি। আমাদের একজন শহীদ হয়েছে। আরেকজনকে মিলিটারি ধরে নিয়ে গেছে। পাঁচজন বেঁচে গেছি। তাদের সঙ্গে আর পেরে উঠিনি। আর যুদ্ধ করতে পারিনি। বেশি গুলি করছিল। পরে আমরা চলে আসি। )

আবদুল্লাহ বাংলানিউজকে আরও বলেন, 'দেশর মধ্যে যাইয়রে যতদিন পর্যন্ত পরান দিত ন পাইরজ্যম এতদিন পর্যন্ত আঁই বরদাশত ন গইরযুম। আঁই গেইলাম যে পরান দিবারলাই। আল্লাহ আঁরে এডে ঢুকাই দিয়ে বুলি বাঁচি আছি দি। ঠ্যাঁ বালা হইলে আবার যুদ্ধ গইরতাম যাইয়ূমগুই। অনরা আঁরলাই দোয়া গইরজন। ’ (দেশে গিয়ে যতদিন পর্যন্ত প্রাণ দিতে না পারব ততদিন আমি (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বার্মিজদের) ক্ষমা করব না। আমি প্রাণ দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। আল্লাহ আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে আমি বেঁচে গেছি। পা ভালো হলে আমি আবার যুদ্ধ করতে চলে যাব। )

আবদুল্লাহর বাবা আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আবদুল্লাহকে তিনজন মিলে একটি বাঁশের তৈরি ভাড়ে করে নাফ নদীর পাড়ে আনেন। সেখান থেকে নদী পার হয়ে তারপর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পা থেকে গুলি বের করা হয়েছে।

আবদুল্লাহসহ তার পরিবারের ১০ সদস্য বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তবে তার মা, দুই বোন ও এক ভাই এখনো মিয়ানমারে রয়ে গেছেন।

আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, যারা মিয়ানমারে রয়ে গেছেন তারাও বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রওনা হয়েছিল। কিন্তু পথে বৃষ্টি বেশি আসায় পাহাড়ের ভেতরে এক আত্মীয়ের বাসায় রয়ে গেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে তারাও চলে আসবেন।

দেশে ফিরে ছেলে আবারও যুদ্ধে যেতে চাইলে আব্দুল মালেক বাধা দেবেন না, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। কারণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া দায়িত্ব বলে মনে করেন আবদুল্লাহ এবং তার বাবা আব্দুল মালেক।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এর আগে উখিয়া উপজেলার বালুখালী পাহাড়ে চার নারীর সন্ধান মিলেছিল যাদের স্বামী তাদের স্ত্রীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিতে থেকে গেছেন মিয়ানমারে।

গত মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ তথ্য দিয়েছে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে সোয়া তিন লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।