ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অটোরিকশা চালাচ্ছিল সেলিম, ব্যাগ টান দেয় দিলীপ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
অটোরিকশা চালাচ্ছিল সেলিম, ব্যাগ টান দেয় দিলীপ ছিনতাইকারী সেলিম ও দিলীপ

চট্টগ্রাম: নগরীতে চীনা দম্পতির ব্যাগ ছিনতাইয়ে জড়িত ছিলেন দুই ছিনতাইকারী দিলীপ বণিক ওরফে মনিরুজ্জামান এবং মো.সেলিম। এই দুই পেশাদার ছিনতাইকারী ব্যাগ টানা পার্টির সদস্য।  ছিনতাইয়ের সময় অটোরিকশা চালাচ্ছিল সেলিম আর ব্যাগ টান দেয় দিলীপ বণিক।

পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে দিলীপ বণিক ও সেলিম এসব তথ্য দিয়েছেন।   গত ১৯ আগস্ট দিলীপকে এবং ২১ আগস্ট সেলিমকে গ্রেফতারের পর তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

মনিরুজ্জামান ও সেলিমকে গ্রেফতার করতে গিয়ে নগরীতে গত রমজানে সংঘটিত মার্কিন নাগরিককে ছিনতাইয়ে জড়িত শাহজাহানকেও গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।  

চাঞ্চল্যকর দুই মামলার তিন আসামি গ্রেফতার এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য জানাতে বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মো.শহীদুল্লাহ।

  এসময় ছিনতাইয়ের শিকার চীনা দম্পতিও ছিলেন।

শহীদুল্লাহ বলেন, গত ১৮ জুলাই ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ রোডে চীনা নাগরিকের ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপটি ফেনী থেকে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।   তবে তাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, ১ হাজার মার্কিন ডলার ও চীনের জাতীয় পরিচয়পত্রও ছিনতাই হয়েছিল।   সেগুলো এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

‘গত রমজানে মার্কিন নাগরিক এশিয়ান উইম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন।   ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা নাগর পন্ডিত নামে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছিলাম। ঘটনায় আরও একজন জড়িত ছিল। শাহজাহান নামে ওই ছিনতাইকারীকেও আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। ’

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) হাসান মো.শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, চীনা নাগরিক ছিনতাইয়ের ঘটনার পরই ডিবি এবং ডবলমুরিং থানা মিলে যৌথভাবে অভিযান শুরু করি।  দিলীপকে গ্রেফতারের পর তার তথ্যমতে শাহজাহানকে আটক করি।   শাহজাহান এবং দিলীপ দুজনই সেলিমের বিষয়ে তথ্য দেয়।   ডবলমুরিং থানা সেলিমকে গ্রেফতার করে।  তারা আরও কয়েকজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীর বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।   আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।  

‘সামনে ঈদুল আজহা।  ব্যাগ টানা পার্টি কিংবা ছিনতাইকারীরা সুযোগ খুঁজতে পারে।  তাদের প্রতিরোধের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আমরা চালাচ্ছি।  তবে যাত্রীদের সতর্ক হতে হবে।  রিকশায় বসার পর যাত্রীরা তাদের ব্যাগ যেন রাস্তার দিকে না রেখে মাঝখানে রাখেন, তাহলে ছিনতাই সহজ হবে না। ’ বলেন হাসান

গ্রেফতার দিলীপ বণিক সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুরের মৃত হরিপদ বণিকের ছেলে।   বর্তমানে নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা দিলীপ ধর্মান্তরিত হয়ে মনিরুজ্জামান নাম ধারণ করেন।   সেলিম একই উপজেলার কালাপানিয়া এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে।   সেলিম থাকেন পাহাড়তলী থানার ফইল্যাতলী বাজারে।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার দিন ভোরে সেলিম ফোন করে দিলীপকে ঘুম থেকে তোলে।   তারপর দুজন অটোরিকশা নিয়ে বের হয়।   প্রথমে তারা খুলশী, পাঁচলাইশ এলাকায় ঘুরে।  সেখানে ছিনতাই করতে না পেরে দুজন যাচ্ছিল বন্দরের দিকে।  

চীনা নাগরিকদের রিকশা ছিল আগ্রাবাদে অর্কিড হোটেলের সামনে দেওয়ানহাট অভিমুখী।   আর সড়কের বিপরীত পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বন্দর অভিমুখী দিলীপ ও সেলিমের অটোরিকশা।   দিলীপ রিকশায় চীনা নাগরিক দেখে সেলিমকে বলেন, এদের ব্যাগ ‍টান দেওয়া যাবে।   তখন সেলিম অটোরিকশা বাদামতল মোড় পর্যন্ত গিয়ে ঘুরিয়ে দেয়।   অর্কিড হোটেল থেকে কিছুদূরে গিয়ে ব্যাগ টান দিয়ে চৌমুহনীর বামে সড়ক দিয়ে চলে যায়।  

‘টেক্সিতে বসেই তারা টাকা ভাগাভাগি করে ফেলে।  দুই লাখ টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা রাখে অটোরিকশার জন্য।  আর ৯০ হাজার টাকা করে নেয় দুজনে। তবে এক হাজার ডলারের হিসাব পাওয়া যায়নি।   কাগজপত্রের ব্যাগ তারা হালিশহরের দিকে নিয়ে ফেলে দিয়েছে। ’ বলেন ওসি মহিউদ্দিন সেলিম

গ্রেফতার অভিযানে থাকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো.ইলিয়াস খাঁন বাংলানিউজকে জানান, গ্রেফতার হওয়া তিনজনই পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী।   সেলিমের বিরুদ্ধে নগরীর কোতয়ালী, ডবলমুরিং ও খুলশী থানায় মোট ৬টি মামলা আছে।   ২০১১ সালের ২৩ জুন তাকে কোতয়ালী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।  ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পায়।   পরদিন তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়।    

শাহজাহান পেশাদার সিএনজি অটোরিকশা চালক।   ১৮ বছর ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছে।   ২০১৩ সালের ২০ জুলাই কোতয়ালী থানায় গ্রেফতার হয়েছিল শাহজাহান।   জামিনে বেরিয়ে ঢাকায় চলে যায়।   ছয় মাস আগে দিলীপ তাকে আবারও চট্টগ্রামে এনে ছিনতাইয়ে জড়িত করে।

দিলীপ ২০১২ সালে ভারতে মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিল।   গাড়ির ব্যবসা এবং ভারত থেকে অবৈধ পথে মোটরসাইকেল আনতে গিয়ে দিলীপ ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।   ২০১৬ সালের অক্টোবরে দিলীপকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।   ১৭ দিনের মাথায় জামিনে বেরিয়ে যায়।  এরপর গত ডিসেম্বরে পাহাড়তলী থানায় গ্রেফতার হয়।   দেড় মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসে।

গ্রেফতার অভিযানে থাকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দিলীপ, সেলিম, শাহজাহান, নাগর, ভুট্টু, ইউনূস, ফরিদ, মোস্তফা, কাদের, সেলিম, মিরণ, ইমাম হোসেন ইমন এরা সবাই ব্যাগ টানা পার্টি।   এদের গ্রুপে আরও কয়েকজন আছে।   এদের কেউ জেলে থাকলে যে বাইরে থাকে সে জামিনে সহযোগিতা করে।   সাধারণত দুজন মিলে ব্যাগ টানার গ্রুপ তৈরি করে।   দুজন, সর্বোচ্চ তিনজন, এর বেশি গ্রুপে থাকে না।  

চীনা নাগরিককে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কায়সার হামিদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দিলীপকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।   সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডবলমুরিং থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭

আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।