ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চোখের আলো ফেরাতে মাশরাফুলকে নেওয়া হচ্ছে ভারতে

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
চোখের আলো ফেরাতে মাশরাফুলকে নেওয়া হচ্ছে ভারতে মাশরাফুলকে নেওয়া হচ্ছে ভারতে। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখের আলো হারাতে বসা বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মাশরাফুল আল কারীবকে (১৪) চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

চোখের অবস্থা ক্রমে খারাপের দিকে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে পাসপোর্ট তৈরি করে মাশরাফুলকে ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ২টার ফ্লাইটে মাশরাফুলকে নিয়ে রওনা দিয়েছেন তার বাবা কামরুজ্জামান ও চাচা আসাদ জামান।

এর আগে ২৯ জুলাই বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ অষ্টম শ্রেণির কোচিং ক্লাসে জ্যামিতি এঁকে দিতে না পারায় মাশরাফুলকে বেত্রাঘাত করেন। এতে তার বাম চোখের কর্নিয়া ফেটে যায়।

যোগাযোগ করা হলে বিমানবন্দর থেকে মাশরাফুলের বাবা মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলের বাম চোখে ব্যথার যন্ত্রণায় কাতর। শুধু কান্না করে। আর বলে, বাবা আমি কি আর চোখে দেখতে পাবো না। তুমি আমার চোখের আলো ফিরিয়ে দাও। তাই নিরুপায় হয়ে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছি। ’

মাশরাফুল বাম চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোচিং ক্লাসে জ্যামিতি এঁকে দিতে না পারায় স্কুলের শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ টেপ মোড়ানো বেত দিয়ে আমার ছেলেকে মেরেছে। বেত্রাঘাতে ছেলের বামচোখে আঘাত লেগে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, সেভরন এবং ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করানো হয়েছে। কিন্তু বাম চোখের কর্নিয়ার দুই জায়গায় ফেটে গেছে। চোখের রক্তনালীতে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ফরিদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে ছিল আমার ছেলে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন বাম চোখে ক্রিটিক্যাল অপারেশন করা জরুরি। তবে চোখের আলো ফিরে পাওয়ার বিষয়ে তিনি আমাকে কনফার্ম করতে পারেননি। চোখের এই ক্রিটিক্যাল অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে চিকিৎসকের অনাস্থা বুঝতে পেরে অনেকটা নিরুপায় হয়ে ছেলেকে ভারতে নিয়ে যাচ্ছি। ছেলের জন্য সবার কাছে আমি দোয়া চাই। ’

‘এরইমধ্যে অনেক টাকাপয়সা খরচ হয়ে গেছে। ছেলের চোখের আলো ফেরাতে আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ভারতের চেন্নাই নিয়ে যাচ্ছি। ’ যোগ করে মাশরাফুলের বাবা

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মাশরাফুলের বাবা। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদের আদালতে অভিযোগটি সরাসরি এফআই‌আর হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নগরীর ইপিজেড থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে ৮ আগস্ট দুপুরে ইপিজেড থানা পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ বিল্লাহকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আরিফ বিল্লাহকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত ওই শিক্ষককে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বর্তমানে হাজতে রয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের যথাযথ শাস্তির দাবিতে ইপিজেড এলাকায় মানববন্ধনও করেছে বেপজা স্কুলের অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

মাশরাফুলের চাচা আসাদ জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সামান্য জ্যামিতি এঁকে দিতে না পারায় মাশরাফুলকে ওই শিক্ষক মেরে চোখের কর্নিয়া নষ্ট করে দিয়েছে। তার শিক্ষাজীবন নষ্ট হওয়ার পথে। তার বন্ধুরা কিছুদিন পর জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। আর মাশরাফুল এখন চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। হারাতে বসেছে বাম চোখের আলো। আমরা এ শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কোন শিক্ষার্থীকে চোখের আলো হারাতে না হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘন্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭

এসবি/আইএসএ/টিসি

**শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখের আলো ‘হারাতে’ বসেছে স্কুলছাত্র

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad