ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘ঘরহারা’ নারীর অঝোর কান্না, ডিসি’র সান্ত্বনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
‘ঘরহারা’ নারীর অঝোর কান্না, ডিসি’র সান্ত্বনা ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বসতঘর হারানোর কথা বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে অঝোরে কেঁদেছেন এক নারী।  এসময় তার স্বামী-সন্তানরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।  অভিযোগ করেন, সরকারি খাসজমি থেকে তাদের অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে।  তাদের বসতঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। 

বাঁশখালী পৌর সদরে প্রকাশ্যে এই অমানবিক ঘটনা পৌর মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) জ্ঞাতসারে হয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন বিধু বালা শীল নামে ওই নারী।

গণশুনানির সঞ্চালক চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী এসময় ওই নারীকে সান্ত্বনা দেন।

  উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ।

বিধু বালা তার স্বামী নিধু কান্তি শীল ও দুই মেয়েকে নিয়ে হাজির হন গণশুনানিতে।

  প্রথমে তার স্বামী কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, পৌর সদরে নিজের বসতঘরের সঙ্গে কিছু খাসজমি তাদের দখলে ছিল।   মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করার জন্য তাদের খাসজমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।   ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন কিছুদিন পরপর এসে জায়গা পরিমাপ করে আর তাদের হুমকি-ধমকি দেয়।  

উচ্ছেদের বিষয়ে পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী চাহেল তস্তুরীর ভূমিকা ছিল বলে দাবি করেন নিধু কান্তি শীল।

জেলা প্রশাসক পৌর মেয়রের কাছে জবাব জানতে চান।   মেয়র বলেন, তাদের গিয়ে বলেছিলাম মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হচ্ছে।   তোমার জায়গা ছেড়ে দাও।  

জবাব দিতে গিয়ে ইউএনও বলেন, তারা মামলা করেছিল।   মামলায় হেরে গেছে।   এরপর সময় দেয়া হয়েছিল।   পরে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এসময় বিধু বালা শীল বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।   তিনি বলেন, স্যার, আমার তিনটা মেয়ে।   একদিনের মধ্যে মেয়র আর ইউএনও মিলে আমার ঘর ভেঙে দিয়েছে।   আমি বিচার চাই স্যার।   আমরা যদি দোষ করি স্যার আমাদের বিচার করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক তাকে সান্ত্বনা দিয়ে মেয়র ও ইউএনওকে বলেন, আপনারা অনেক ক্ষমতাবান।   বিষয়টা আপনারা আরো সফটলি হ্যান্ডল করতে পারতেন।   ধরে নিলাম, উনারা আইনের সঠিক জায়গায় ছিলেন না।   তারপরও বিষয়টি সফটলি দেখতে পারতেন।   এটা আপনারা ঠিক করেননি।

এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সাংবাদিক রাহুল কান্তি দাশ।   তার অভিযোগ, তথ্য পাওয়ার জন্য যথানিয়মে আবেদন করেছিলেন তিনি পিআইওর কাছে।   তাকে তথ্য তো দেয়া হয়নি, উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে।  তৎকালীন পিআইও মাসুদুর রহমান এবং বর্তমানে হজে থাকা কর্মচারি আবুল মনসুর তাকে হয়রানি করেন।  

‘পিআইও অফিসে একটি সংঘবদ্ধ চক্র আছে।   এরা কমিশন আদায় করে।  যেসব প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো সঠিক কি না অনুসন্ধান করা হোক। ’ বলেন রাহুল দাশ

জবাবে জেলা প্রশাসক দুদক কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার আমি ডিসি।   এসব কথা যখন শুনি, আমার তো রক্তক্ষরণ হচ্ছে।   উনি যা বললেন এটা বাস্তবতা স্যার।  

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোন তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক হিমেল বড়ু্য়াও।

বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।