টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক গরু-মহিষ আসছে। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে পশু আমদানি বেড়েছে বহুগুণ।
রোববার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে ৫টি ট্রলার বোঝাই করে ৩৮৩ টি গবাদিপশু আমদানি করা হয়েছে। আমদানিকৃত গবাদিপশুর রাজস্ব জমা দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হবে।
মিয়ানমার থেকে শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে গবাদি পশু আমদানিকারকরা হলেন টেকনাফ পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির, সাবরাং ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ, মৌলভী বোরহান, মোঃ সোহেল, জাফর, নুরুল আলম, টেকনাফের আবু সৈয়দ মেম্বার, মো. হাশেম, শহীদুল ইসলাম, ম মং চি। এদের হয়ে করিডোরে
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গবাদি পশু আমদানি হয়।
পশু আমদানিকারক আব্দুল্লাহ মনির বলেন, এ বছর ঈদুল আযহার আগে মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু আসছে। আগে কখনো এত বিপুল সংখ্যক পশু আমদানি হয়নি। তবে করিডোরে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে পশুর সুরক্ষায় কোন শেড নেই, এছাড়া পশু পরিবহনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর।
তিনি আরো বলেন, শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আমদানিকারক ও পশু ব্যবসায়ীরা অনেকটা নিরাপদ রয়েছে। করিডোরে কোন ধরণের চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হতে হয়না । এই করিডোরে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আমদানিকারক ও পশু ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১ মাস ১৯ দিনে মিয়ানমার থেকে শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে ১৪ হাজার ২৪১ টি গবাদি পশু আমদানি খাতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭১ লাখ ২০ হাজার ১ শ টাকা।
চলতি মাসের ১৯ দিনে ৬ হাজার ৫৪১ টি গরু-মহিষ আমদানি করা হয়েছে, যার রাজস্ব আয় ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৫’শ টাকা এবং জুলাই মাসে ৭ হাজার ৭০০ গবাদিপশু আমদানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার ৬ শ টাকা। তবে চলতি মাসের বাকী সময় পর্যন্ত পশু আমদানির এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থ বছরের ২ মাসেই রাজস্ব আয় এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের আওতাভূক্ত করিডোরের ইজারাদার ও ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রচুর গবাদি পশু আমদানি হচ্ছে।
স্থানীয় আমদানিকারক ও দুরদূরান্ত থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীদের যাতে কোন হয়রানি বা সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয় সেদিকেও গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। শাহপরীর দ্বীপ করিডোর আমদানিকারক ও পশু ব্যবসায়ীদের জন্য শতভাগ নিরাপদ কারবার ক্ষেত্র।
এদিকে শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বৃদ্ধির খবরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা গবাদি পশু ক্রয় করতে শাহপরীর দ্বীপে ছুটে এসেছে। তারা গরু মহিষ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্যে।
টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্ত এ কে এম মোশারফ হোসেন বলেন, পশু আমদানীতে শাহপরীর দ্বীপ করিডোরটি রাজস্ব প্রাপ্তিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আগের তুলনায় বেশি সংখ্যক গবাদি পশু আমদানি হচ্ছে। তবে এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে আরো বেশি গবাদি পশু আমদানি করা সম্ভব। তিনি গবাদি পশু আমদানীতে ব্যবসায়ীদের আরো বেশী এগিয়ে আশার আহবান জানিয়েছেন।
টেকনাফস্থ শাহপুরী স্টেশন কোস্ট গার্ড কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এমএস কবির (চিফ পেটি অফিসার) বলেন, মিয়ানমার থেকে পশুবাহী ট্রলার করিডোরে যাতে নিরাপদে আসতে পারে সেজন্য কোস্ট গার্ড সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে নাফনদীতে কোস্টগার্ড টহল জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু আসা রোধে ২০০৩ সালে ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপ করিডোর চালু করা হয়। এতে প্রতি গরু মহিষে ৫০০ টাকা ও ছাগল ২০০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। বিজিবি ও শুল্ক বিভাগের সহায়তায় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
টিএইচ/টিসি