কোরবানির প্রাণীর বাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর নগরীতে খুঁটি বসিয়ে সেগুলো বেপারিদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়। খুঁটিতে গরু রেখে বিক্রির বিনিময়ে নিজেদের মর্জিমতো ভাড়া নির্ধারণ করে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সরকারি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন।
বিষয়টিকে খুঁটি বাণিজ্য আখ্যা দিয়ে সংঘাতের আশংকা এবারও করছে নগর পুলিশ।
রোববার (২০ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অপরাধ সভায় খুঁটি বাণিজ্যের প্রসঙ্গ এসেছে। একইসঙ্গে ট্রাকে প্রাণী পরিবহন, কোরবানির বাজার ও ঈদুল আজহার নিরাপত্তার প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার খুঁটি বাণিজ্য যে কোনভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। খুঁটি বাণিজ্য নিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এবং উপ-কমিশনারকে (ডিসি) জবাবদিহি করতে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন।
সূত্রমতে, সভায় চারটি সুষ্পষ্ট সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার। একটি হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের ইজারা দেয়া বাজারের বাইরে নগরীর কোথাও খুঁটি বসিয়ে কিংবা অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ বাজার বসিয়ে কোরবানির প্রাণী বিক্রি করা যাবে না।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে প্রতিদিন দুইটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। এতে সার্বিক সহায়তা দিবে নগর পুলিশ। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বাজারের বাইরে কোন বাজার বসানো তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছেদ করবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তৃতীয়টি হচ্ছে, কোরবানির প্রাণীবোঝাই পরিবহন থামিয়ে তল্লাশি করা যাবে না। কোন ধরনের সিগন্যালও দেয়া যাবে না। কোন সার্জেন্ট কিংবা থানার পুলিশ সদস্য এই কাজ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চতুর্থটি হচ্ছে, প্রাণীবোঝাই পরিবহন থামিয়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করতে হবে। এই অভিযোগ যার বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
নগরীতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত আটটি বাজার আছে। এর মধ্যে দুইটি স্থায়ী ও ছয়টি অস্থায়ী। বিবিরহাট ও সাগরিকা গরুর বাজার স্থায়ী হাট। কর্ণফুলী পশু বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং বাজার, স্টিল মিল বাজার, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, পোস্তারপাড় স্কুল মাঠে ছাগল বাজার ও কমল মহাজন হাট- এছয়টি অস্থায়ী বাজার।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বাজার ছাড়া কোথাও পশু বিক্রি করা যাবে না। আর খুঁটি বসিয়ে টাকা আদায়, এটা তো আমরা কোনভাবেই অ্যালাউ করব না। এটার বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর থাকার জন্য বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার মতে, সিটি করপোরেশনের ইজারা দেয়া প্রত্যেকটি বাজারের সামনে প্রতিবছর খুঁটি বসিয়ে প্রাণী বিক্রি করা হয়। সেই খুঁটি বসানোর সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সরকারি দলের নেতাকর্মী জড়িত আছেন। প্রতিবছরই খুঁটি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর থাকার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালীদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে পারে না পুলিশ। এবারও ব্যতিক্রম দেখছেন না কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
আরডিজি/টিসি