ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ব্যথা নিরাময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার শুরু চমেকে

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
ব্যথা নিরাময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার শুরু চমেকে আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে ব্যথার জায়গা পরীক্ষা করছেন ডা. মো. মঈন উদ্দীন

চট্টগ্রাম: এমআরআইয়ের চেয়ে কম খরচের আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যেই তীব্র ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন দেওয়ার ‘ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট’ চালু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ।

রোববার ও বৃহস্পতিবার মেরুদণ্ড, ঘাড়, কাঁধ, হাঁটু, কোমর, জয়েন্ট, নার্ভ পেইনের রোগীদের পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। জনহিতকর এ উদ্যোগে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন বাত-ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মঈন উদ্দীন।

এতে সাড়া দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। ৩০ লাখ টাকা দামের একটি পোর্টেবল আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন দেওয়া হয়েছে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগকে (২ নম্বর ওয়ার্ড)।

ডা. মঈন উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, সচরাচর কারপাল টানেল সিনড্রম, ফ্রোজেন সোল্ডার, পিএলআইডি, মাথাব্যথা, সায়াটিকা (নার্ভের পেইন), স্পোর্টস ইনজুরির জন্য এমআরআই করাতে হতো। বিশেষ করে ১৬ জয়েন্ট, হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার জন্য এমআরআই দিত। একেকটি এমআরআইতে খরচ পড়ে নয় হাজার টাকা। অনেক রোগীদের পক্ষে এমআরআই করার টাকা জোগাড় অসম্ভব ছিল। বিষয়টি আমাকে চিন্তায় ফেলে দেয়। তখন থেকে আমি বিকল্প কিছু খুঁজছিলাম। ২০১৪ সালে পিজিতে এফসিপিএস করলাম। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ নিলাম। ইউরোপ, আমেরিকা, থাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুরে এটি বহুল ব্যবহৃত। দেশে ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের হায়দ্রাবাদে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলাম। আমাদের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ও চমেক হাসপাতালের পরিচালকের আন্তরিকতায় পোর্টেবল আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন পাওয়ার পর এখানেই সেবাটি চালু করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সহায়তায় এ সেবাটি দিতে পারেন। একটি আলট্রাসনোগ্রাম সর্বোচ্চ দেড়-দুই হাজার টাকার বেশি হবে না।

তিনি বলেন, আগে আলট্রাসনোগ্রাফি হতো পেটের আর বুকের। আমরা জয়েন্টেও আলট্রাসনোগ্রাফি করছি। কোমর, মেরুদণ্ড, কাঁধ, ঘাড়, জয়েন্ট নার্ভের ব্যথা বা ব্লক নিরাময়ে এ পদ্ধতিতে সঠিক জায়গায় ইঞ্জেকশন পুশ করতে পারছি। আমরা প্যারালাইজড রোগীদের পেনল ইঞ্জেকশন দিচ্ছি। হাঁটুব্যথা বা গোড়ালি ব্যথার জন্য রোগীর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্লেটলেট রিচ প্লাজমা (পিআরপি)তৈরি করে দিচ্ছি। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমরা নার্ভ রুট ব্লকের মাধ্যমে এপিডুরাল ইঞ্জেকশন দিচ্ছি। এটি তীব্র ব্যথা ৬০ শতাংশ কমিয়ে থাকে। মেরুদণ্ডসহ অনেক তীব্র ব্যথার জন্য ‘ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট’র ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় অপারেশন থেকে রোগীদের স্বস্তি দেবে।

চমেক হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন পটিয়ার উত্তর ছনহরার আবদুল কাদেরের ছেলে মো. জাবেদ হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তিন মাস আগে পিএলআইডিতে তীব্র ব্যথা অনুভব করি। তখন মেরুদণ্ডে অপারেশন করা হয়। এখন আবার তীব্র ব্যথা। তাই এখানে এসেছি। এখন শুনছি ব্যথা কমানোর জন্য সঠিক জায়গায় আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। আগে যদি জানতাম অপারেশন করাতাম না।

ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান শওকত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট আমাদের নতুন সংযোজন। আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে ব্যথার জায়গায় আমরা ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছি এ পদ্ধতিতে। আলট্রাসনোগ্রাফিতে রেডিয়েশনের ঝুঁকি নেই। খরচও কম। নিঃসন্দেহে রোগীরা উপকৃত হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বিনামূল্যে রোগীদের এ সেবা দিচ্ছি। শিগগির হয়তো এ সেবার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ফি ধার্য করা হবে।   

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।