ভবনের সামনে বিশাল খোলা চত্বর। চত্বরের উপরটা পুরো ঢাকা কাচের শেডে।
চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির (ইডিইউর) নবনির্মিত নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসের চিত্র এটি। নগরীর নাসিরাবাদ সংলগ্ন মোজাফ্ফর নগর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে নিজস্ব জমিতে গড়ে উঠেছে কারুকার্যেভরা ইডিইউর স্থায়ী ক্যাম্পাস। যা এখন পড়ুয়াদের নূতন ঠিকানা।
প্রকৃতির কোলে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে তোলা হয়েছে এই দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রিন আর্কিটেকচারের ধারণাকে কাজে লাগিয়েছে ইডিইউ কর্তৃপক্ষ।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দুই একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাম্পাস। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের শ্রেণিকক্ষ। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে রয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫ শিক্ষার্থীর লেকচার শোনার ব্যবস্থা। আছে পৃথক শ্রেণিকক্ষও। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে গ্রুপস্টাডি ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য তৈরি করা হয়েছে কমনরুম। মেয়েদের জন্য আলাদা প্রার্থনাগার, টিভিকক্ষ, ইনডোর গেমস ফ্যাসিলিটিসহ নানান সুযোগ সুবিধা।
আছে অত্যাধুনিক ১১টি ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, ব্যবহারিক ১০০টি কক্ষে সার্বক্ষণিক আলো-বাতাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বিশাল ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একাডেমিক ভবনেই রয়েছে ৫০/৬০ হাজার বই রাখার সুদৃশ্য দ্বি-তল লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে চমৎকার ক্যাফেটোরিয়া।
সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য খোলা আকাশের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে বড় আকারের এমফি থিয়েটার। গ্রিক মডেলের এমফি থিয়েটার পুরো চট্টগ্রামে এই প্রথম। এই এমফি থিয়েটারকে বলা হচ্ছে ক্যাম্পাসের সিগনেচার মার্ক বা বিশেষত্ব। শিক্ষার্থীরা যেন এখানে এসে বসে আড্ডা দিতে পারে, ছাত্র-শিক্ষকরা যেন আলোচনা করতে পারে, গান-নাটক-প্রজেক্টর দিয়ে সিনেমা দেখানোর সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা থেকে এই এমফি থিয়েটার তৈরি করা হয়েছে।
নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরির বিষয়ে ইডিইউর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও নূতন ক্যাম্পাসের সিইও সাঈদ আল নোমান বলেন, ইডিইউর বয়স মাত্র ৮ বছর। বয়সের হিসেব করলে ইডিইউ এখনো ছোট্ট শিশু। কিন্তু এ বয়সেই তার নিজস্ব ও বৃহৎ একটা ক্যাম্পাস আছে। বিষয়টা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের।
প্রকৃতির সঙ্গে মিশিয়ে ক্যাম্পাসটি তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা একটা গ্রিন আর্কিটেকচার। প্রকৃতির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা। সবাইতো অট্টালিকা তৈরি করে। আমরা তৈরি করেছি ল্যান্ডসেইভ মোডে। সর্বোচ্চ আড়াইতলা করেছি। এক্ষেত্রে পাহাড়ের ঢালটাকে ব্যবহার করা হয়েছে। পাহাড়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে সিঁড়ি বেয়ে বা লিফট দিয়ে উপরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। আমার মনে হয় এই বৈশিষ্ঠ্যটা অনন্য, যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় না।
অনেক বড় জায়গা নিয়ে ক্যাম্পাসটা করা হয়েছে, যেন অবাধ বিচরণ করা যায়। চারপাশটা খোলামেলা রাখা হয়েছে। আমরা খুব অল্প শিক্ষার্থী ভর্তি করাই। তাদের জন্য এ ক্যাম্পাসটি যেন বৃহৎ হয়, এটিকে যেন তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে সেভাবেই ক্যাম্পাসটি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসও একটা বিষয়। যেন নিজেকে প্রকৃতির মাঝে আবিষ্কার করতে পারে। পড়াশোনাটা একটা এনজয়মেন্টের ব্যাপার, শুধুমাত্র ডিসিপ্লিনের ব্যাপার নয়, রুটিনের ব্যাপার নয়, এটা আনন্দেরও ব্যাপার। যেখান থেকে মানুষ জ্ঞান আহরণ করবে। আর এতে পরিবেশেরও একটা প্রভাব আছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ইডিইউর স্থায়ী ক্যাম্পাসে অন্তত ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করতে পারবে। বর্তমানে ইডিইউতে ৭টি বিষয়ে (বিবিএ, এমবিএ, ইংরেজি, অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম) উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের দুই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে কিংবা যারা ভর্তির পর পরবর্তী সেমিস্টারে ভালো ফলাফল করবে তাদের জন্য এখানে চালু রয়েছে চেয়ারম্যানস ডিসটিঙগুইশ স্কলারশিপ, বোর্ড অব ট্রাস্টিস (বিওটি) গ্র্যান্ট, চেয়ারম্যানস আউটস্টেন্ডিং স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, চেয়ারম্যানস মেরিট অ্যাওয়ার্ড, ক্যাম্পাস জব অপরচুনিটিসহ নানান সুযোগ সুবিধা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
আইএসএ/টিসি