বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের প্রীতি সম্মিলনে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন নিজের অভিনয়ের এই গল্প শুনিয়েছেন। বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মোশাররফ।
ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার (১৯ আগস্ট) নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয় প্রীতি সম্মিলনের।
স্মৃতিচারণ করে মোশাররফ বলেন, আমাদের কলেজে তিনটি হোস্টেল ছিল। আমি হোস্টেলে থাকতাম। সবসময় দেখতাম বার্ষিক নাটকে শুধু হিন্দু আর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ছেলেরাই অংশ নিচ্ছে। মুসলমান যারা ছিল তারা অভিনয় করতো না।
‘সাহস করে আমি একবার নাটকে অংশ নিই। জীবনে সেটাই আমার প্রথম এবং শেষ অভিনয়। সেই অভিনয়ের জন্য আমি পুরস্কারও পেয়েছিলাম। জীবনে একবার অভিনয়ের সেই স্মৃতি এখনও আমার মনে গেঁথে আছে। ’ বলেন মোশাররফ
তিনি বলেন, মাটির রাস্তা, কাদামাখা পথ পেরিয়ে আমাদের কলেজে যেতে হত। কিন্তু ক্লাসে গিয়ে মনটা ভরে যেত। শিক্ষকদের পাঠদান ছিল আসাধারণ। আমরা তখন একবার যা পড়েছি তা মনে গেঁথে নিয়েছি। শুধু বইয়ের পড়া নয়, শিক্ষকদের কাছ থেকে জীবন চিনেছি, সমাজ চিনেছি।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে থাকা এই নেতা শিক্ষার্থীদের জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মোশাররফ বলেন, বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি আর শিল্পায়নের খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞাননির্ভর শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারে টিকতে হলে আমাদের সন্তানদের প্রযুক্তি এবং জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা পেতে হবে।
স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো.আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে যুগ্ম সম্পাদক ব্যাংকার মো.আব্দুল মোমিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুস্তফা নঈম।
বক্তব্য রাখেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিল্পপতি তিনকড়ি চক্রবর্তী, প্রকৌশলী মাহফুজুল মান্নান, অধ্যাপক পার্থপ্রতীম চৌধুরী এবং কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর সাগর কান্তি দে।
৭৫ বছর পূর্তিতে প্রীতি সম্মিলন উপলক্ষে ‘হীরক জয়ন্তী’ নামে একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
শনিবার প্রীতি সম্মিলন উপলক্ষে কলেজের সাবেক-বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মিলনমেলা বসে অনুষ্ঠানস্থলে। আড্ডা আর কথামালায় সাবেক শিক্ষার্থীরা ফিরে যান কলেজ জীবনের সেই দিনগুলোতে।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি বোয়ালখালীতে কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য হীরক জয়ন্তী উৎসব উদযাপন করে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমিতি।
গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগণের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় তিনি ১৯৩৯ সালের ১৪ জুলাই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।
তার শিক্ষাগুরু, অবিভক্ত ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন মাখন লাল নাগ।
শুরু থেকেই কলেজটিতে ছিল ছাত্রাবাস। অনগ্রসর বৃহত্তর চট্টগ্রামের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে এই কলেজে পাঠ নিয়েছে অনেক তরুণ-যুবক, যাদের অনেকেই দেশের এখন স্বনামখ্যাত নাগরিক।
গ্রামাঞ্চলের এই কলেজটি দেশের স্বাধীনতা ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবেও পরিচিত।
অবিভক্ত ভারতের দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি নেলী সেনগুপ্তা কলেজটি পরিদর্শন করেছিলেন।
এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, বিজ্ঞানী ড.কুদরৎ-ই-খুদা, ড. কাজী মোতাহের হোসেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ আর মল্লিক, পল্লীকবি জসিম উদ্দীনও বিভিন্ন সময় এই কলেজে এসেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
আরডিজি/টিসি