তাই নিজ বাংলো ফুলঝুড়ির পুকুরকে ‘সুইমিং পুল’ বানিয়ে শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানো শুরু করেছেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম হোসেন।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে রাউজান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন এবং উপজেলা স্কাউটসের সহযোগিতায় শুরু করেছেন ‘সাঁতার শিখুন জীবন বাঁচান’ শীর্ষক সাঁতার শেখানো কর্মসূচি।
তাদেরই একজন মাসরুর তাহাসিন।
তিনি জানান, প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ছেলে ও মেয়েদের সাঁতার শেখানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইউএনও মো. শামীম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাউজানে ছয় মাসে ৩৮ শিশু মারা গেছে পানিতে পড়ে। তারা যদি সাঁতার জানত তবে প্রাণে বেঁচে যেত। রাউজানে তো সুইমিং পুল নেই যে বাচ্চারা সাঁতার শিখবে। একটি সুইমিং পুল বানাতেও ছয় মাস সময় লাগবে। এত দিন বাচ্চারা মারা যাবে পানিতে ডুবে আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব তা তো হয় না। তাই নিজের বাংলোর পুকুরেই সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ নিলাম।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা সাঁতার শেখানোর জন্য সাতটি টিউব, ১০টি লাইফ জ্যাকেট, রশিসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনেছি। ৫-২০ ফুট গভীর পুকুরে বাঁশ কিনে লাল-সবুজ রং করে তিনটি সারি করেছি পুকুরে। একসময় পদ্মা নদীতে সাঁতার কেটেছি। অনেক পুরস্কারও পেয়েছিলাম। আজ আমি নিজেই একটানা এক ঘণ্টা ৪২ মিনিট পুকুরে ছিলাম। বাচ্চারা দারুণ খুশি আর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে দেখে নির্ভার লাগছে। আমরা এ উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে করতে চাই। পুরো রাউজানে ছড়িয়ে দিতে চাই।
ইউএনও বলেন, আমরা পুকুর ও আশপাশের এলাকাটি সিসিটিভির আওতায় রেখেছি নিরাপত্তার জন্য। এ ছাড়া স্কাউট ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনতো থাকছেই। সুতরাং অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে বাচ্চাদের সাঁতার শেখানোর জন্য আনছেন। আমরা চাই অভিভাবকদের সচেতন করতে। একটু সময় দিলেই বাচ্চারা সাঁতার শিখে ফেলতে পারে। এর জন্য সুইমিং পুল প্রয়োজন নেই। আমরা মা-বাবার ভয় তাড়াতে চাই। আশাকরি, সফল হবো।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানোটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ এদেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডোবা। এর জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার। তবে অর্ধেক সাঁতার শেখালে হবে না। মোটামুটি দক্ষ করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ৬-৭ বছর বয়স থেকে সাঁতার শেখাতে পারি। এর চেয়ে কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য বাড়ির দরজায় হাঁটু সমান বেড়া, পুকুর পাড় ও ঘাটে বেড়া, কোমরে বা পায়ে ঝুমঝুমি বেঁধে দেওয়া, লাল জামা পরালে বাচ্চার গতিবিধি লক্ষ রাখা সহজ হয়। বাচ্চারা যদি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায় তবে চোখে চোখে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এআর/টিসি