ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কোরবানির হাটে এবার দেশীয় জাতের গরুই বেশি

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
কোরবানির হাটে এবার দেশীয় জাতের গরুই বেশি ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: আসন্ন কোরবানির ঈদের বাজারে এবার দেশীয় জাতের গরুই বেশি পাওয়া যাবে। ফলে এবার ভারতীয় গরু কিনে চিন্তায় পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা বলছেন, চাহিদা বাড়ায় স্থানীয়ভাবে পশু পালন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে একদিকে ভারতীয় গরু নির্ভরতা কমছে অন্যদিকে ভালো মানের পশু পাওয়ার নিশ্চিয়তা বাড়ছে।

বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ক্রেতা ও স্বাস্থ্যবিদরা।

কোরবানির মৌসুমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটাতাজা করে।

এসব পশুর মাংস মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। রয়েছে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মোটাতাজা করলে সেটি খেতে সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।   

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক বাংলানিউজকে জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় ৫ লাখ ৯১ হাজার পশু (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫১ হাজার বেশি। গত বছর ৫ লাখ ৪০ হাজার পশু জবাই হয়েছিল। এবার ১০ শতাংশ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে, গত ২১ জুলাই পর্যন্ত নগরী ও ১৪ উপজেলায় কোরবানিযোগ্য ৫ লাখ ২ হাজার পশু মজুদ রয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ হাজার কম। তবে ঈদের আগেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু সরবরাহ শুরু করবেন। এতে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।

এবার চট্টগ্রামের বাজারে ভারতীয় গরু না আসলেও সংকট থাকবে না উল্লেখ করে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, গত বছরও ভারতীয় গরু আসেনি। বাজারে দেশি গরু বেশি থাকায় শেষদিকে গরুর দাম কমে যায়।

পাহাড়তলী গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, এবার কোরবানিতে পশুর সমস্যা হবে না। কারণ এবার দেশীয় গরু গতবারের চেয়ে বেশি আছে।

এদিকে দাম কিছুটা বেশি হলেও দেশীয় গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা গরুর মাংসের স্বাদ বেশি। এছাড়া স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থাকে না।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা পশুর মাংস খেলে ক্যান্সার, লিভার ড্যামেজ, বিকলাঙ্গ ও হরমোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা গরুর হৃদস্পন্দন বেশি থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব গরু দেখতে মোটা মনে হলেও মূলত মাংস হয় কম, পানি থাকে বেশি। মাংস খেলে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

পশু মোটাতাজাকরণের স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন ভারতীয় সীমান্ত হয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো গেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণে নিরুৎসাহিত করছেন জানিয়ে ডা. রেয়াজুল হক বলেন, কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মোটাতাজা করা অনেক পশু মারা যাচ্ছে।  তাই খামারিরা এখন অনেক সচেতন।

এবার চট্টগ্রামে ২৫০ স্থানে গরুর হাট বসবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব হাটে জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের মেডিকেল টিম থাকবে। এছাড়া ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও তদারকি করবেন। কোন পশু এনথ্রাক্স কিংবা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত কিনা সে বিষয়ে ক্রেতাদের নিশ্চিত করবেন চিকি‍ৎসকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭

এমইউ/আইএসএ/টিসি

**কোরবানিতে জবাই হবে ৬ লাখ পশু

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।