ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিরিজ বোমার এক যুগ

পলাতক জঙ্গিরা কি নব্য জেএমবির সঙ্গে ?

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
পলাতক জঙ্গিরা কি নব্য জেএমবির সঙ্গে ? সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ/ ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: বন্দর নগরী চট্টগ্রামে সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত পলাতক ৩৬ জঙ্গি নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কি না অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ। বিভিন্ন সূত্রে পুলিশের কাছে তথ্য আছে, পলাতক জঙ্গিদের কেউ কেউ নব্য জেএমবির সদস্যদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সদর দপ্তরের নির্দেশে গোয়েন্দা ইউনিটগুলোকে সক্রিয় করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি হিসেবে থাকা ৩৬ জঙ্গিকে এক যুগেও খুঁজে পায়নি পুলিশ।  এর বাইরে চট্টগ্রামে সিরিজ বোমা হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে পুলিশ ভ্যানে সিনেমা স্টাইলে হামলা চালিয়ে ছিনতাইয়ের এক বছর পরও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

  

জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো.তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, জঙ্গিরা কখনোই সঠিক নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে না।   এজন্য যাদের নাম আমরা পেয়েছি সেগুলো সঠিক কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

 ঠিকানা পাওয়া তো আরও দুরূহ।   তবে ৩৬ জন জঙ্গিকে আমরা এখনও ধরতে পারিনি এটা ঠিক আছে।   

‘সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় যেটা সেটা হচ্ছে পলাতক এসব জঙ্গি নব্য জেএমবিতে যুক্ত হয়েছে কি না।  এটা আমরা খতিয়ে দেখছি।  পুলিশ হেডকোয়ার্টারেরও একটা নির্দেশনা আছে।  আমরা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ গোয়েন্দা ইউনিট যেগুলো আছে সেগুলোকে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছি। ’

পলাতক জঙ্গিদের বাইরে সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত যারা জামিনে আছে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তানভীর।

সূত্রমতে, ৩৬ জঙ্গীর সবাই সিরিজ বোমা হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।  তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে চট্টগ্রামে সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নিয়েছিল।  সিরিজ বোমা হামলাকারীদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের জবানবন্দিতে এবং তদন্তে এসব জঙ্গীর নাম প্রকাশ পেয়েছিল।  

এরা হল, মো.মালেক, মামুন, হাফেজ হাবিবুর রহমান, বিপ্লব, মো.শফিকুল ইসলাম, মো.আব্দুল হাফিজ, আবু নূর প্রকাশ আইয়ূব আলী, মো.ফরিদুজ্জামান স্বপন, সুমন,  মো.সেলিম, মো.ফেরদৌস,সাইফুল, মো.ইউসুফ, দেলোয়ার হোসেন, জাহিদ, আনিছ, আবুল কাশেম, জসিম, সালাউদ্দিন, নূরুল আমিন প্রকাশ নাবিল প্রকাশ মিন্টু, মিজানুর রহমান প্রকাশ শাওন, মো.জনি শেখ, আবুল হোসেন,তসলিম, শাহাদাৎ হোসেন, বাবুল, আরিফুর রহমান ওরফে আকাশ, জুয়েল খান, তরিকুল ইসলাম মিঠু, রকিবুল হাসান উজ্জ্বল, আব্দুর রহমান, ফরহাদ নাছিম বাপ্পী, মো.ইব্রাহিম, মো.নোয়াব মিয়া,মো.মনিরুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল্লাহ, মো.রফিকুল ইসলাম এবং মো.জাহিদুল ইসলাম

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্পটে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল।  এসব ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর আট থানায় আটটি মামলা দায়ের হয়েছিল।  এসব মামলার আসামীদের মধ্যে পলাতক, কারাগারে থাকা এবং জামিনে মুক্তি পাওয়া জেএমবি সদস্যদের নিয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের শীর্ষ জঙ্গীদের নামের তালিকা’ ২০১৪ সালে তৈরি করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া আটটি মামলা দায়ের হয়েছিল।  এর মধ্যে সাতটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে সিএমপির বিশেষ শাখার কাছে তথ্য আছে।

পলাতক জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ‘নিস্ক্রিয়তায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন আহমেদ।  তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেসব জঙ্গি পলাতক আছে, তারা তো হাওয়াই মিলিয়ে যাননি।  তারা এই সমাজেই আছে।  জঙ্গিরা জঙ্গিবাদেই থাকবে, এটাই নিয়ম।  নব্য জেএমবির সঙ্গে তাদের মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।  পুলিশের উচিৎ বিষয়টির দিকে সর্বোচ্চ নজর দেয়া।

সূত্রমতে, বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেএমবির শীর্ষ তিন নেতা মাওলানা মো.আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই এবং আতাউর রহমান সানিসহ মোট ছয় জঙ্গীর ফাঁসি হয়েছে।  এখনও যারা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আছে তাদের মধ্যে আছে, জেএমবির বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ, মো.ছদরুল আলম, আব্দুস ছাত্তার মোল্লা, মো.জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কালাম আজাদ, মো.জুলফিকার আলী, আব্দুল খালেক প্রকাশ লাল্টু, শাহাদাৎ আলী, মো.ইব্রাহিম, মো.লাইমুন্নাফ প্রকাশ জাফর, মো.রফিকুল ইসলাম এবং মো.লাল্টু।

চট্টগ্রামে সিরিজ বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান এবং আরশাদুল আলম প্রকাশ টি আলম বর্তমানে কারাগারের বাইরে আছে।   টি আলম ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান।   তিনি দুইটি মামলায় পাঁচ বছর করে কারাভোগ শেষে মুক্তি পান।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে এবং এক পুলিশকে হত্যা করে জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন নেতাকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।   ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গির একজন জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান।  

চট্টগ্রামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-কমিশনার (ডিবি-বন্দর) মো.শহীদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, যেসব জঙ্গি পলাতক আছে এবং যারা বাইরে আছে তারা নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কি না কিংবা প্রশিক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।   বিভিন্ন সোর্সে আমরা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৩ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।