ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বৃষ্টিতে নামা পাহাড়ি বালু নিয়ে কাড়াকাড়ি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
বৃষ্টিতে নামা পাহাড়ি বালু নিয়ে কাড়াকাড়ি! এক ঠেলাগাড়ি বালু চকবাজারের সাইটে পৌঁছে দিলে ৭০০ টাকা।

চট্টগ্রাম: সার্সন রোডের সিজিএসের ফটকের সামনের নালাটি ভরে গেছে পাহাড়ি বালুতে। সেই বালু তুলে রাস্তার একপাশে ছোট ছোট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একটু এগিয়ে মোড়ে যেতেই দেখা গেল নালার বালু ঠেলাগাড়িতে তুলছেন ইসমাইল হোসেন (৪০)।

বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল তিনটার চিত্র এটি।

ইসমাইল জানালেন, নির্মাণকাজে পাহাড়ি তাজা বালুর চাহিদা বেশি।

এক ঠেলাগাড়ি বালু চকবাজারের সাইটে পৌঁছে দিলে ৭০০ টাকা। ভারী বৃষ্টির পর আমরা তিনজন ঠেলাগাড়ি নিয়ে বের হই বালু খোঁজার জন্য।
এক দিনের ঠেলাগাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা। ভাগ্য ভালো হলে দিনে তিন-চার ঠেলাগাড়ি বালু পাই। সেটি নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর।  

তিনি জানান, বাদশা মিঞা সড়ক, গোয়াছিবাগান, মেডিকেল হোস্টেল গেট এলাকায় অন্তত তিনটি শ্রমিকের গ্রুপ ভারী বৃষ্টিতে নেমে আসা পাহাড়ি বালু সংগ্রহ করে। বৃষ্টি থামলে আমরা দ্রুত চলে আসি। প্রথমে রাস্তার ওপর থেকে চকচকে বালুগুলো কোদাল দিয়ে আলতো করে নিয়ে ফেলি। তারপর নালা থেকে তুলে পানি সরার জন্য স্তূপ করে রাখি। যে গ্রুপ যে বালু তুলবে সেটি তারা পরে এসে নিয়ে যাবে।  

শুধু সার্সন রোড বা বাদশা মিঞা সড়ক নয়, যেখানে পাহাড় সেখানেই ভারী বৃষ্টিতে নেমে আসা বালুতে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে মন্তব্য করেছেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। তিনি বলেন, জামালখান কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন নালা থেকে সেদিন ১০ ট্রাক বালু তুললাম। দুদিন পর ভারী বৃষ্টি হলো, এখন সেখানে ২০ ট্রাক বালু জমেছে। ভারী বৃষ্টিতে চেরাগি পাহাড় মোড়, জামালখান আইডিয়্যাল স্কুলের সামনের সড়ক বালুতে সয়লাব হয়ে যায়। এ ছাড়া খুলশী, বায়েজিদ, মোজাফফরনগর, অক্সিজেন ইত্যাদি পাহাড়ি এলাকার নালাগুলোতে এটি নিত্যদিনের চিত্র।    

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বাংলানিউজকে জানান, নগরীর খাল-নালা দ্রুত ভরাট হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারী বৃষ্টিতে নেমে আসা পাহাড়ি বালু, পাইলিংয়ের মাটি অনেকাংশে দায়ী। একদিক থেকে খাল-নালার মাটি-বর্জ্য তোলার কাজ শুরু করার পর দেখা যায় কিছু দিনের মধ্যে আবার আগের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ষোলশহর দুই নম্বর গেটসহ কয়েকটি স্থানে সিলট্র্যাপ থাকলেও তা পাহাড় কাটার তুলনায় কিছুই না। চট্টগ্রামে অর্ধশতাধিক সিলট্র্যাপ এবং পাহাড়কাটা কঠোরভাবে বন্ধ করা উচিত।    

পরিবেশবিদ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বেলে মাটির। সরকারি, বেসরকারি মালিকানাধীন এসব পাহাড়ে নির্বিচারে স্থাপনা নির্মাণ, দখল-বেদখল, গাছ কাটা, পাহাড় কাটা আর ঝুঁকিপূর্ণ বসতির কারণে ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক পাহাড়ের মাটি ক্ষয় হচ্ছে। দিন দিন পাহাড়গুলো বৃক্ষশূন্য ন্যাড়া হচ্ছে। এতে নালা-নর্দমা, খাল থেকে শুরু করে কর্ণফুলী পর্যন্ত ক্রমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এটি অশনি সংকেত। এখন একটু বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হচ্ছে চট্টগ্রাম। নদীতে পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় জোয়ারে ভাসে নগরীর নিম্নাঞ্চল।

তিনি বলেন, বিপর্যয় থেকে চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের খাল, পাহাড়, নালা, জলাধার, দেশের লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদী বাঁচিয়েই সমস্ত পরিকল্পনা নিতে হবে। আমাদের প্রচুর সিলট্র্যাপ (বালু ধরার ফাঁদ) তৈরি করতে হবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন পাওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পে ৪২টি সিলট্র্যাপ তৈরির জন্য ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।  

রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি, নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।