ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে শিশুটি

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
মাকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে শিশুটি  সাদমান সিয়াম উদ্দিন

চট্টগ্রাম: আট বছরের ফুটফুটে শিশু সাদমান সিয়াম উদ্দিন। গর্ভধারিণী মাকে দেখলেই আঁতকে ওঠে শিশু সাদমান।  চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আমাকে মেরে ফেলবে। মেরে ফেলবে। ’ কোনভাবেই যেতে চায় না মায়ের কাছে।  

মাকে ঘিরে কেন শিশু সাদমানের এই আতংক ? পুলিশ এবং আদালতে জবাবও দিয়েছে সাদমান।   যৌথ পরিবারে ঝগড়ার জেরে মুখের উপর বালিশ চেপে ধরে মা এই শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

  সম্পর্কের বেড়াজাল ভালো করে বুঝতে শেখার আগেই এই নির্মম অভিজ্ঞতার কথা সাদমান নিজের মুখে ‍জানিয়েছে।

সেই ঘটনার পর থেকে সাদমানকে আর কাছে পাননি মা।

 শিশু সাদমানের ইচ্ছায় আদালতের নির্দেশে তার ঠাঁই হয়েছে চাচীর ঘরে।  

নিজের মায়ের হাতে নির্যাতিত হয়ে চাচী রুমা আক্তারের ঘরে ঠাঁই নেওয়া সামদানকে নিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।  মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে সাদমানকে বাসা থেকে উদ্ধারের পর বুধবার আদালতে হাজির করে পুলিশ।

আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সন্তানের জন্য নিরাপদ স্থান হচ্ছে মায়ের কোল।   অথচ আট বছরের এই শিশু সন্তান আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছে, সে তার মায়ের কাছে যাবে না।   এসময় আদালতও বিস্মিত হয়েছেন।   যদিও মা সন্তানকে পাবার হকদার, কিন্তু এই শিশুর নিরাপত্তা এবং তার আকুতি বিবেচনা করে আদালত চাচীর জিম্মায় দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে ‍জানা গেছে, সাদমান নগরীর পাঁচলাইশ থানার মোহাম্মদপুর এলাকার গাউছিয়া বাড়ির ওবায়দুল্লাহ আল মামুন এবং আইরিন আক্তার সুপ্তার ছেলে।   সৌদিআরবে থাকেন মামুন।   তার আরও দুই সন্তান আছে।   এরা হল, দেড় বছর বয়সী ছেলে আদমান আল হাজমা ও ছয় মাস বয়সী মেয়ে ফাতেমা জান্নাত আইরিশ।   মামুনের স্ত্রী সুপ্তা তিন সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।  যৌথ পরিবারে ঝগড়ার কারণে গত জুনে সুপ্তা সাদমানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে বাবার বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারিতে চলে যান।  

শিশুটিকে উদ্ধারকারী পাঁচলাইশ থানার এস আই ‍আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, সাদমান নিজেই মায়ের সঙ্গে যেতে রাজি না হলে তাকে ফেলে চলে যায় মা।   এরপর গত ৩১ জুলাই সাদমান স্কুলে যাবার সময় তাকে জোর করে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল সুপ্তা।  

‘এসময় সাদমানের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছেলেধরা ভেবে সুপ্তাকে ধরে ফেলে।   তখন সুপ্তার শ্বশুর রশিদ আহম্মদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুপ্তাকে ছাড়িয়ে নেন এবং সাদমানকে বাড়ি নিয়ে যান।  কিন্তু সুপ্তা আবার থানায় এসে তার বাচ্চাকে উদ্ধার করে দেয়ার জন্য আবেদন করেন। ’

এস আই আবুল কাশেম বলেন, সাদমান তার চাচা হারুনুর রশিদ এবং চাচী রুমা আক্তারের কাছে ছিল।   মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে আমরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি।   কিন্তু থানায় সাদমানকে যখন তার মায়ের সামনে নেয়া হল, তখন আমরা আসল ঘটনা টের পেলাম।   মাকে দেখলেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে।   আমাকে মেরে ফেলবে, মেরে ফেলবে।   এসব বলে চিৎকার করছে।  

‘তখন আমরা শিশুটিকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করি।   শিশুটি সবকিছু আমাদের খুলে বলে।   আসলে তার মা একটু ঝগড়াটে, উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির।   বাসায় ঝগড়া করে ছেলেকে খুন করতে চেয়েছিল বলে শিশুটি আমাদের বলেছে।   এই বয়সের একটা শিশু মায়ের সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। ’

বুধবার পুলিশ শিশুটিকে আদালতে হাজিরের পর তার মা এবং চাচী উভয়ে তাকে জিম্মায় নেয়ার আবেদন করেন।   চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজ শিশুটিকে চাচীর জিম্মায় দেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম রাজন।

আদালত প্রাঙ্গনে সাদমান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমার মা প্রথমে আমার পেটে তিনটা লাথি মারে।   এরপর আমাকে বালিশ দিয়ে চাপা দেয়।   আমার আপু (চাচাতো বোন) এসে গিয়েছিল।   এরপর বালিশটা ফেলে দেয়।  

শিশুটিকে জিম্মায় পাওয়া রুমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সাদমান এতদিন আমার কাছেই ছিল।   আমি কখনো তাকে আমার জায়ের ছেলে এটা মনে করিনি।   তাকে আমি নিজের সন্তানই জেনেছি।   নিজের সন্তানের মতো করেই তাকে মানুষ করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।