মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বেপারি পাড়া মোড়ে দৃশ্যটি দেখা গেছে। সাংসদ আফছারুল আমিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানবপ্রাচীরে অংশ নিতে এভাবে কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছিলেন।
সামিহা বঙ্গবন্ধুকে চিনলেও মানবপ্রাচীরে জড়ো হওয়া অধিকাংশ শিশু শিক্ষার্থীই সাংসদের বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক জবাবটি দিতে পারেনি। শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংসদের বক্তব্যের সময় শিক্ষার্থীদের অনেকে হাততালি দিয়ে উঠেন।
আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে পোস্ট অফিস কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সাংসদ এক শিশু শিক্ষার্থীর কাছে গিয়ে জানতে চান, আজ তোমরা কেন স্কুলে যাওনি ? জবাবে ওই শিক্ষার্থী বলেন, আজ শোক দিবস।
আজ কেন জাতীয় শোক দিবস, এই প্রশ্ন করে সাংসদ কোন সদুত্তর না পেয়ে বলেন, ১৫ আগস্ট কি হয়েছিল ? সঠিক জবাব পাননি সেই প্রশ্নেরও।
হালিশহর হাতেখড়ি স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র শাহেদের কাছে সাংসদ জানতে চান, বঙ্গবন্ধু কে ? জবাব আসে, ‘শেখ হাসিনার বাবা। ’ এসময় সাংসদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু শেখ হাসিনার বাবা নন, তিনি আমাদের জাতির পিতা।
একই প্রশ্নের জবাবে আগ্রাবাদ বয়েজ স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র রাশেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন শেখ মুজিবর রহমান।
আগ্রাবাদ টিএন্ডটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে সাংসদ প্রশ্ন করেন, ১৫ আগস্ট কি হয়েছিল ? জবাব আসে, ‘বঙ্গবন্ধু মারা গিয়েছিল। ’ সাংসদ আবারও প্রশ্ন করেন, ‘মারা গিয়েছিল নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল। ’ সরাসরি জবাব আসে, জানি না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের জানার পরিধি এত কম দেখে সাংসদের সঙ্গে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কি ক্লাশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছুই পড়ান না ? কিছু শিখিয়েও তো নিয়ে আসতে পারতেন।
বঙ্গবন্ধু কিভাবে মারা গেছেন, তার জবাব আগ্রাবাদ কেএসএ হাকিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র জিয়াবুল হোসেন দিয়েছেন এভাবে, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তিনি যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেছেন। ’
তবে একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মোস্তফা সাকিবের কাছ থেকে মিলেছে সঠিক জবাব, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ’
তবে যাদের কাছ থেকে সঠিক জবাব আসেনি তাদের সামনে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলেছেন সাংসদ আফছারুল আমিন।
এক্সেস রোডে সাংসদ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করার পর সমবেত শিক্ষার্থী ও দলীয় কর্মীরা সবাই মিলে হাততালি দিয়ে উঠেন। এসময় সাংসদের সঙ্গে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল হোসেন ডিউক ধমক দিয়ে উঠেন। তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাততালি দিচ্ছ কেন, উনি (সাংসদ) শোকের কথা বলেছেন, তাতে কি তোমাদের খুশি লেগেছে ?
মানবপ্রাচীর পরিদর্শনের সময় সাংসদকে উদ্দেশ্য করে যুবলীগ নেতা শামীম মোরশেদ বলেন, ‘লিডার, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমরাই আমাদের সন্তানদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলছি না। এখানে কয়জন নেতা তাদের সন্তানদের মানবপ্রাচীরে এনেছেন ? সন্তানদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে জানাচ্ছি না বলেই তো তার মোটিভেটেড হয়ে কেউ শিবির আর কেউ জঙ্গি হচ্ছে। ’
সাংসদ মাথা নেড়ে যুবলীগ নেতার কথা সমর্থন করেন।
জানতে চাইলে সাংসদ ডা.আফছারুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, যে কোমলমতি শিশুরা মানবপ্রাচীরা এসেছে, তাদের মাথায় অন্ত:ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শব্দটি ঢুকিয়ে দেয়া গেছে। এখন যেটা করতে হবে, পরিবারে এবং স্কুলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শিশুদের জানাতে হবে। এটা রাজনীতির বিষয়, এমন চিন্তা করে তাদের কাছ থেকে বিষয়টা দূরে সরিয়ে রাখলে হবে না। শিশুদের সামনে ইতিহাসের সত্যপাঠ তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
আরডিজি/টিসি