তবে আটকের পর সুমন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্যই তারা চারজন মিলে চালককে খুন করেছিল। স্ত্রীর টিউমার অপারেশনের জন্য টাকা সংগ্রহে সুমন ছিনতাইয়ে নেমেছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো.নোমানের আদালতে সুমন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতয়ালী জোন) মো.জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুমনসহ চারজনের নাম পেয়েছি।
‘প্রত্যেকেই পেশাদার ছিনতাইকারী। তারা মূলত ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই করে। তারপর সেগুলো নির্দিষ্ট লোকের কাছে বিক্রি করে। নগরীর বাইরে উপজেলা সদরে গিয়েও তারা ছিনতাই করে। সেখানে কখনো তারা নিজেরাই সিএনজি অটোরিকশায় করে যায়, আবার কখনো ট্রেনে যায়। ’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে সুমন জানিয়েছেন, মোবাইলে যোগাযোগ করে চার ছিনতাইকারী নগরীর মাইলের মাথা এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে তারা রাহাত্তারপুল এলাকায় আসেন। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা যেটির চালক ছিলেন আব্দুল জলিল, সেটি ভাড়া করে সড়কের শেষ মাথায় যেতে বলেন। রিকশায় চারজন বসা ছিলেন। সেটি কালামিয়া বাজার এলাকায় গেলেও সেখানে লোকজন বেশি থাকায় ছিনতাই করতে না পেরে সেটি ঘুরিয়ে দিতে বলেন তারা।
রিকশা কালামিয়া বাজারের ডেপুটি রোডে পৌঁছার পর বেলাল রিকশা থামাতে বলেন। রিকশাওয়ালা কথা না শুনে চালাতে থাকলে বেলাল তার মাথা চেপে ধরেন। রিকশা থেমে গেলে চারজন নেমে যান। তখন সালাহউদ্দিন রিকশাওয়ালার পেটে ছুরি মারে। বেলাল পেছন দিকে ছুরিকাঘাত করেন। রিকশাচালক চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়েন। এসময় তার মোবাইলটি পড়ে যায়। সুমন সেটি তুলে নেয়।
এর মধ্যে সড়কের দুইদিক থেকে দুটি গাড়ি আসছিল। তখন চারজন চারদিকে পালিয়ে যান। সুমন রাহাত্তারপুলে এসে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে মাইলের মাথা চলে যান। রিকশাচালকের মোবাইলটি দুইদিন ব্যবহারের পর সুমন সেটি বেলালকে দিয়ে দেয়। রিয়াজউদ্দিন বাজারে চোরাই মার্কেটে বেলাল সেটি বিক্রি করে দেন।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-কোতয়ালী জোন) মো.জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ৮ আগস্ট সাতকানিয়া উপজেলা সদরে একটি সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই করতে গিয়ে বেলাল ও জাকির ধরা পড়ে। সুমন ও সালাহউদ্দিন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। বেলাল ও জাকির উভয়ে ৯ আগস্ট আদালতে ছিনতাইয়ের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন যাতে সুমন ও সালাহউদ্দিনের নাম ছিল।
‘মূলত পত্রিকায় সাতকানিয়ার ছিনতাইয়ের ঘটনাটি পড়ে জানতে পারি, এই চক্রটি নগরীর বিভিন্ন স্থানে একই স্টাইলে ছিনতাই করে। তাদের টার্গেট ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং সিএনজি অটোরিকশা। তখন আরও গভীরভাবে তদন্ত শুরু করি। এক পর্যায়ে সাতকানিয়ার ঘটনায় জড়িত সুমনকে আটক করি। আটকের পর সে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ’
সাতকানিয়ার ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা জাকির ও বেলালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন এসি জাহাঙ্গীর।
জবানবন্দিতে সুমন আরও জানান, তার স্ত্রীর টিউমার অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। বিষয়টি তার মামাতো শ্যালক বেলালকে জানালে তিনি ছিনতাইয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের প্রস্তাব দেন। এরপর থেকে তারা ছিনতাই শুরু করেন।
তবে সুমনের এই বক্তব্য নিছক অপরাধের দায় এড়ানোর চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন এসি জাহাঙ্গীর আলম।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
আরডিজি/টিসি