ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘প্রথম চাপেই ডানপাশের দুজন শেষ, চালক আধঘণ্টা ছিল’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
‘প্রথম চাপেই ডানপাশের দুজন শেষ, চালক আধঘণ্টা ছিল’ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সুজন ও সাইদুল। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ‘আমাদের সিএনজি অটোরিকশার চালক বলেছিলেন, লরিটি চলে যাক তারপর টান দেব। লরিটির কেবিনটি পার হলো। তারপর ভারী কনটেইনারটিসহ গাড়িটি চাপা দিল আমাদের। প্রথম চাপেই আমার ডানপাশের দুজন শেষ। সিএনজি চালক আধঘণ্টার মতো বেঁচেছিল।’

রোববার (১৩ আগস্ট) বন্দর থানাধীন নিমতলা এলাকায় কনটেইনারবাহী লরিচাপায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী মো. সাইদুল (২৬) বাংলানিউজকে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের দোতলার বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করার সময় কথা হয় তার সঙ্গে।

রামগতি লক্ষ্মীপুরের বিবিরহাট এলাকার আবদুল মোতালেবের ছেলে তিনি। তার পাশে ছিলেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া অপর যাত্রী পশ্চিম লক্ষ্মীপুরের দুধু মিয়া বেপারির বাড়ির মো. শফিউল্লাহর ছেলে মো. সুজন (২৯)।
মারা গেছেন মো. মোশাররফ হোসেন মুসা (৫০), মো. ওয়াজেদ আলী বাবুল (৪৫) ও সিএনজি চালক মো. জসিম সিকদার (৩৮)। দুর্ঘটনার ছবি

সাইদুল বললেন, আমরা চারজন আন্তঃজেলা পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও সহযোগী। সবাই সবাইকে মুখচেনা চিনি। সকালে নিমতলা থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে পশ্চিম মাদারবাড়ির কদমতলি পোড়া মসজিদ এলাকায় যাচ্ছিলাম ভাড়া ধরার জন্য। সিএনজি অটোর পেছনের সিটে বসেছিলাম আমরা তিনজন। আমি সবার বামপাশে ছিলাম। চালকের বামপাশে বসেছিলেন সুজন। যখন গাড়ি নিমতলা মোড়ে এলো তখন একটি কনটেইনার বোঝাই লরি হর্ন দিল। আমাদের সিএনজি অটোচালক অপেক্ষা করলেন, লরিটি পার হওয়ার জন্য।

বলতে বলতে একসময় ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলেন সাইদুল। বললেন, চোখের পলকেই ঘটল দুর্ঘটনা। লরিটি চাপা দিল আমাদের সিএনজি অটোরিকশাকে। প্রথম চাপেই শেষ ডানপাশের দুজন। কোনো কথাই বলতে পারেনি। আমি হাফ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা পেয়ে মাথাটা ঘুরাতে পারছি। কোমর আটকে আছে লোহালক্কড়ের মধ্যে। পা আটকে আছে। মুচড়ে আছে পুরো শরীর। অনেকক্ষণ পর ছোট্ট একটি রেকার (উদ্ধারকারী যান) এলো। লোড কনটেইনারের নিচে আমরা। রেকারটি লরির পেছনে লাগাল দড়ি। ভাবলাম পেছনে আলগা করলে সামনে চাপ পড়বে। তখন আমিও মারা পড়ব। জোরে চিৎকার করলাম। কাজ হলো। তারা বিষয়টি বুঝতে পারলেন।

চোখ ভিজে গেল সাইদুলের। বললেন, বাড়িতে নয় মাসের একটি মেয়ে আছে। সেই মেয়েটির চেহারাটিই ভেসে উঠেছিল দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার সময়। মেয়ের ভাগ্যেই আমি বেঁচে গেলাম। দুর্ঘটনার ছবি

একটু শান্ত হলেন। তারপর বললেন, লরি চালক কিংবা সিএনজি অটোরিকশাচালক কারও দোষ নেই। সব দোষ রাস্তার। হ্যাঁ, রাস্তার ওপর এত গর্ত দেশের আর কোনো সড়কে দেখিনি। ওই রাস্তার দুরবস্থার কারণেই তিনজন প্রাণ হারালেন।

সুজনও মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। চালকের বাম পাশেই ছিলেন তিনি। বললেন, যদি সিএনজি অটোরিকশার চারপাশে স্টিলের বেড়া না থাকত তবে হয়তো সবাই দৌড়ে পালাতে পারতাম। দেখলাম যখন লরির কেবিন (চালকের আসন) আমাদের সিএনজি অটোরিকশা পার হলো। এরপর লরির লেজের প্রথম চাকাগুলো গর্তে পড়ল। তারপর উল্টে গেল। আমরা চাপা পড়লাম। ‍অনেক চেষ্টা করলাম সিএনজির দরজা খুলতে। পারলাম না, দুমড়ে মুচড়ে গেল।

বলতে বলতে চোখ মুছলেন তিনি।  

কন্টেইনারবাহী লরিচাপায় নিহত ৩

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭

এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।