ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীরব দর্শক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীরব দর্শক পেঁয়াজের আড়ত

চট্টগ্রাম: দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেতারা বলেছেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন তালবাহনায় পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।

বিশেষ করে ভারতে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পরপর প্রতিবেশী দেশ নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ না নিয়ে ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ ছাড়াও পেঁয়াজের সংকটের মোকাবেলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) কাজে না লাগিয়ে অর্থব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে।

রোববার (১৩ আগস্ট) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতারা এসব কথা বলেন।

তারা জরুরিভিত্তিতে ভারত ছাড়াও প্রতিবেশী অন্যান্য দেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা, সংকট নিরসনে বর্তমানে মজুদ করা পেঁয়াজের সুষ্ঠু বণ্টন, আমদানিকারক ও খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করা, সংকটকালীন টিসিবিকে দ্রুত কার্যকর করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার তদারকিতে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং জোরদার করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তৎপর করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।

ক্যাব নেতারা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে মূল নিয়ামক উৎপাদক, বিক্রেতা, শ্রমিক ও ভোক্তা। আর দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে এ পক্ষগুলোর স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে যাবতীয় নীতি প্রণয়নের কারণে অন্যপক্ষগুলোর স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। ফলে দেশে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সে কারণে ব্যবসায়ীরা নৈতিকতা বাদ দিয়ে যে যেভাবে পারে পণ্য মজুদ করে সরবরাহ সংকট তৈরি করে ১০০-১৫০ শতাংশ পর্যন্ত লাভে পণ্য বিক্রি করছে।

ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুললে বর্তমানে মজুদ পেঁয়াজগুলো ৩-৬ মাসে আগে আমদানি করা এবং পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্বেও দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটলেও সরকার আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের যথাযথ নজরদারি করেনি। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেখানো পথ অনুসরণ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বেপরোয়াভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দেখার জন্য বাজারেও কেউ নেই। সরকারের মাঠ পর্যায়ে নজরদারির দুর্বলতার কারণে ১৭-১৮ শতাংশ পর্যন্ত চালের শুল্ক হ্রাস করে চাল আমদানির পরেও চালের বাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি, পুরো টাকা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে, সেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারেও অস্থিরতা তৈরি করে পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে একটি মহল।

বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বিকল্প বাজার হিসেবে টিসিবিকে কার্যকর করার দাবি করলেও ব্যবসায়ী নেতারা টিসিবিকে সক্রিয় করতে সরকারকে বিভ্রান্ত করে বাধা দিচ্ছে। তাদের যুক্তি হলো টিসিবি অথর্ব প্রতিষ্ঠান এবং লোকসানি। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোটাই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দখলে, ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরির পরিবর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোটাই ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া দখলে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এটা স্বাভাবিক বললেও প্রকৃতপক্ষে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য এটা বাড়তি বোঝা যা সরকারের অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ম্লান করে দিচ্ছে।

পে‍ঁয়াজের চাহিদা বার্ষিক ২০-২২ লাখ মেট্রিকটন উল্লেখ করে ক্যাব নেতারা বলেন, দেশে উৎপাদিত হয় ১৭-১৮ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ। তবে কোরবানির ঈদে চাহিদা একটু বাড়লেও সরবরাহ জটিলতায় ও মজুদদারির কারণে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটে কিছু ব্যবসায়ী। আর দেশীয় কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হলে এবং ভোক্তা হিসেবে সচেতন হলেই এ সংকট সহজেই মোকাবেলা সম্ভব।

বিবৃতিতে সই করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সহ-সভাপতি হাজী ইকবাল আলী আকবর ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক এএম তৌহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭

এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।