ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেকেন্ডেই বার্তা পাচ্ছেন ২০০০০ জন, জানাচ্ছেন লাখোজনকে

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
সেকেন্ডেই বার্তা পাচ্ছেন ২০০০০ জন, জানাচ্ছেন লাখোজনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ সম্পর্কিত পাঠানো সতর্কবার্তা

চট্টগ্রাম: পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে-কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড়ের আশেপাশে বসবাসরত মানুষের কাছে সে খবর হয়তো অজানা। তাই নিরাপদ আশ্রয়ে না ছুটে পড়ে আছেন ঘরে!

কিংবা সতর্ক সংকেত বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু উপকূলের জেলেদের কাছে হয়তো সে খবর পৌঁছেওনি।

ফলে নিরাপদ স্থানে ফেরার পরিবর্তে উল্টো নৌকা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার।

বিপদ যখন একেবারে সন্নিকটে ঠিক সে সময়ে মাত্র কয়েক শব্দের একটি খুদে বার্তা আর তথ্যই পারে তাদের ‘বাঁচিয়ে’ দিতে।

খুদে বার্তায় তথ্য পাঠিয়ে সতর্ক কিংবা সচেতন করার এমন একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। যার মাধ্যমে বার্তা যাচ্ছে পাহাড় থেকে উপকূলে। জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী নিজের চিন্তাজাত এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার নাম দিয়েছেন ‘ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ডিআইএন)। ’

গত ২০ জুলাই থেকে চালু হয়েছে এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন এর উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলার ১৯১ ইউনিয়নের ১৭১৯টি ওয়ার্ড, ১৫ পৌরসভার ৭৫টি ওয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ৪২টি ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ১৮৩৬ ওয়ার্ডের জনগণ অর্থাৎ পুরো চট্টগ্রামবাসী ওয়ার্ডভিত্তিক টিমগুলোর মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের বার্তা পাচ্ছেন।

মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রবির সহায়তায় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের প্রস্তুতকৃত ডেটাবেজ, পরিকল্পনা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ডিআইএন, চট্টগ্রাম থেকে ডেটাবেজভুক্ত ২০ হাজার মোবাইল ফোনে সেকেন্ডেই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। এতে বার্তার প্রেরক হিসেবে রবি সিম ব্যবহারকারীদের মোবাইলে ‘ডিআইএন সিটিজি’ প্রদর্শিত হচ্ছে। অন্যান্য মোবাইল অপারেটর ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোনে প্রেরকের নম্বর হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে ০১৮৪৭১২১২৪২।

প্রাথমিক ধাপের ডেটাবেজে প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ সদস্যের টিমে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, শিক্ষক, গ্রাম-পুলিশ, ইমাম/পুরোহিত, ও স্কাউটস/এনজিও কর্মী। মূলত প্রতিটি ওয়ার্ডের এই টিমের কাছেই ডিআইএন’র মাধ্যমে মোবাইল ফোনে সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের সেবামূলক তথ্য, দুর্যোগ সম্পর্কিত বা জন-উন্নয়নমূলক জরুরি বার্তা, মানসম্মত শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত দিক-নির্দেশনা, সামাজিক অপরাধ যেমন ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদক প্রভৃতি সম্পর্কিত সচেতনতামূলক বার্তা ও তথ্য প্রেরণ করা হচ্ছে। ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন

সেই টিমের কাজ হলো বার্তা পাওয়া মাত্র তাৎক্ষণিক স্থানীয়ভাবে মাইকিং করে প্রচারণার ব্যবস্থা করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া।

গত ১১মে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখে আসছেন জিল্লুর রহমান চৌধুরী। মোরার ঘা শুকাতে না শুকাতেই পাহাড়ধসের আঘাত। এই দুটি দুর্যোগ প্রশমন কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা থেকেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নতুন এই ধারণা দেন তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যদি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এমন কোনো সিস্টেম তৈরি করা যায়, যার মাধ্যমে জেলার প্রান্তিক এবং দুর্গম এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়েও দুর্যোগের সতর্কতামূলক বার্তা পৌঁছানো যাবে-তাহলেই দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সমন্বয় কাজে ব্যাপক গতি সঞ্চার সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতিতে টিভি কিংবা রেডিওতে দুর্যোগের সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হলেও স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামের জনগণের মাঝে দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতির ব্যাপারে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনীহা দেখা দেয়। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে বার্তা পেয়ে টিমের সদস্যরা যখন মাইকিং করবেন-তখন তারা নিরাপদে আশ্রয়ে ছুটবেন। ’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে সাইক্লোন, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাসসহ  প্রায়শ ভারী বর্ষণে পাহাড়ধস, পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙ্গন ও আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা থাকে। তাই ওয়ার্ড পর্যায়ে যদি দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের দুর্যোগ সম্পর্কে অবহিত এবং স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রয়োজন মাফিক তাদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া যায় তাহলে ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজন সরানো, আশ্রয়কেন্দ্র চালু ও ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব। ’

জেলা প্রশাসক মনে করেন, এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু দুর্যোগ সতর্কতা নয়, সামাজিক অপরাধ নির্মূল, স্বাস্থ্য সচেতন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, সুনাগরিক গঠন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নও সম্ভব। এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্প সমূহ মানসম্মতভাবে সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা এটিও স্থানীয় পর্যায়ে তদারকি করা সম্ভব। ধীরে ধীরে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেসব বার্তাও পাঠানো হবে। ’

এদিকে ডিআইএন চালুর পর থেকে সেবা পেতে শুরু করেছেন চট্টগ্রামবাসী। বার্তা পাওয়ায় তারা আগের চেয়ে দ্রুত সময়ে নিরাপদে সরে যেতে পারছেন বলে জানিয়েছেন।

এদেরই একজন বাঁশখালীর প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলের আবদুল রশিদ।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে অতিবৃষ্টির কারণে ঢল নেমে পাহাড়ধস হতে পারে এমন বার্তা ইউপি সদস্যরা আমাদের জানাচ্ছেন। আমরাও সতর্কতা হিসেবে নিরাপদ এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নিয়েছি। এভাবে যেন সবসময় আমাদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।