ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জলাবদ্ধতা নিয়ে মেয়র নাছির যা বললেন

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
জলাবদ্ধতা নিয়ে মেয়র নাছির যা বললেন আ জ ম নাছির উদ্দীন

চট্টগ্রাম: মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে ১৮ মাস জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।  বুধবার (২৬ জুলাই) নগর ভবনে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জলাবদ্ধতা নিয়ে অনেক সেমিনারে উপস্থিত থেকে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করেছি। মাস্টারপ্ল্যানে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলেছি।

কারণ সমস্যা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বিষয়।
তারপরও সরকার আন্তরিক। তাই বাস্তবায়নের সময়টুকু পর্যন্ত জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।   

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে পুরো শহর প্রটেক্ট করতে হলে, আমার ধারণা সিলট্রেশন, জোয়ারে পলি প্রবেশ, অতি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়া, জলোচ্ছ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মহাপ্রকল্প নিতে হবে। একই সঙ্গে মেইনটেইনেন্সের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি ২০১৬ সালের প্রথম দিকে উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। বিশ্বখ্যাত পাওয়ার চায়নাকে অনুরোধ করে এক বছরে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করেছি। এরপর আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এটি জি টু জি প্রজেক্ট। এখন ইআরডিতে আছে। নির্ভর করবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ওপর। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছি, তারাও একটি প্রকল্প নিয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও একটি প্রকল্প নিয়েছে। যেটিতে রেজাল্ট আসবে, জনগণ রেজাল্ট পাবে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। হিতে যাতে বিপরীত না হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রজেক্ট। তখন উল্টো ফল হবে। তাই সমন্বয় প্রয়োজন আছে। আমি মনে করি, আরও কিছু সময় লাগলেও বাইর থেকে এক্সপার্ট আনতে হবে। নেদারল্যান্ডস সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক নিচের শহর। সেখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা নেই। সেখান থেকে আনা যায় এক্সপার্ট। এসব বিষয় আমি যেখানে যেখানে বলার সুযোগ আছে বলছি। সরাসরি যোগাযোগ করে বলছি আবার লিখিতভাবে বলছি।  

মেয়র বলেন, আমি কখনোই বলিনি জলাবদ্ধতা এক নম্বর সমস্যা। এ সমস্যা এক বছরে সমাধান করার নজির পৃথিবীর কোথাও কেউ স্থাপন করতে পারেনি। পাঁচ বছরের মধ্যে মাত্র দুবছর অতিক্রম করেছি। এখনো ব্যর্থ বলার সুযোগ নেই। খেলার যেমন নির্ধারিত সময় থাকে তেমনি মেয়র পদের মেয়াদ আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই বছর কোনো সময়ই না। এটি চলমান প্রক্রিয়া। সমস্যা প্রকট। টেকসই সমাধানের জন্য ধীরেসুস্থে সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। আগেই বলেছি এটি সময়সাপেক্ষ, দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। পাওয়ার চায়না ফিজিবিলিটি স্টাডিতে এক বছর সময় নিয়েছে। প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন, বাস্তবায়নে আইনি প্রক্রিয়া আছে।

তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চট্টগ্রামের উচ্চতা আড়াই-তিন মিটার। জোয়ারের সময় এক-দেড় মিটার পানির উচ্চতা বাড়ে। অমাবস্যা-পূর্ণিমায় আরও দুই মিটার উচ্চতায় জোয়ার হয়। দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দরকার। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি কেন হচ্ছে, হওয়ার আশঙ্কাগুলো কী এসব বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞ দিয়ে প্রকল্প নিতে হবে। চট্টগ্রাম শহরের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই আলাদা। এখানে ৪৭ শতাংশই পাহাড়। সিলট্রেশন হচ্ছে। সাগর-নদী-সমতল আছে।  

এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভারতে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে না? জলাবদ্ধতা দেশের অনেক জায়গায় হচ্ছে। এটি কি শুধু চট্টগ্রামে হচ্ছে? ঢাকা, খুলনা, সিলেট, কক্সবাজারে, পার্বত্য জেলায় হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরে কত শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে কত মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশাকরি, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে জানিয়ে দিতে পারব। আমার ধারণা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে। পেনিক তৈরি করে লাভ নেই। সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। নালা-নর্দমা যা আছে পরিষ্কার রাখছি। যাতে ভাটার সময় দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে। চট্টগ্রামে অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক উন্নয়নকাজ করছে, খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এগুলো বাধা সৃষ্টি করছে। পানি নামার পথে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এসব আলাদা প্রতিষ্ঠান, আলাদা মন্ত্রণালয়।   

সমন্বয় কে করবে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আইন যেভাবে বলে সেভাবে কাজ করতে হবে। আমি গায়ের জোরে বলতে পারি না আমাকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দাও। আইনের ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে আমাকে। আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি অনেক কিছু। চট্টগ্রাম শহর কি পরিকল্পিত শহর? ড্রেনেজ ব্যবস্থা তো নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর রাতারাতি সব করতে পারব না। আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা কাজ করছি। এক বছরে সব কাজ করে দিতে পারব না। ৩০-৪০ বছরের সমস্যা। অনেক নালার ওপর বহুতল ভবন হয়েছে। বিলের মধ্যে আবাসিক এলাকা হয়েছে। ডাকাইত্যা বিল, বগারবিল এখন আছে? পানি ধারণক্ষমতা কমছে। এসব বিলের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন কারা দিয়েছে? নালার ওপর, খালের ওপর বহুতল ভবনের অনুমোদন কারা দিয়েছে? সব কিছু অ্যাড্রেস করতে হবে।  

ইশতেহার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ইশতেহার পড়ে একজনও ভোট দেন? আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলব। মিডিয়া কিছু এনালাইসিস করে বলে ইশতেহার দিতে হয়। জনগণের অসুবিধাগুলো অ্যাড্রেস করা না হলে তখন বলবে, উনি তো কোনো কাজ করবে না। মিডিয়ায় যখন এসব লেখা হবে তখন ভোটারদের ওপর প্রভাব পড়ে। আমি তো একেবারে সর্বেসর্বা নই। আমার দল আছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় আছে।

সিডিএ আবাসিক এলাকায় সাধারণ জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধে প্রতিটি নালার মুখে ম্যানুয়েল গেট দেওয়া হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমরা হয়তো অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ার ঠেকাতে পারব না। কিন্তু সাধারণ জোয়ার ঠেকাতে পারব। আশাকরি, ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাজটা হয়ে যাবে। এভাবে আমরা একেক এলাকার জনগণকে সাময়িক স্বস্তি দিতে কাজ করছি।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি অবিশ্বাস্য দাবি করে মেয়র বলেন, ঢালাওভাবে বললে হবে না। এটি সঠিক নয়। সেখানে কিছু দোকান, আড়ত আছে রাস্তা থেকে দুই-তিন ফুট নিচে। তাদের সক্ষমতা আছে রাস্তার লেবেল থেকে মেঝে উঁচু করার। তখন তো আর পণ্য ভিজবে না। জোয়ারের পানি উঠলেই আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেও শত শত কোটি টাকার ক্ষতি দাবি করা হতো।   

২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি, খাতুনগঞ্জে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি

১৬৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, দুর্ভোগ নগরবাসীর

পানিবন্দি এসপি অফিস-থানা, কাজকর্ম লাটে

খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি, ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭

এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad