সেই সভার ১১ দিনের মাথায় শুক্রবার (২১ জুলাই) সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের বাস্তহারা পাহাড়ে একাংশ ধসে পাঁচজন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু ও দুইজন নারী।
একইভাবে ২৪ জুলাই (সোমবার) জঙ্গল সলিমপুরে আবারও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। তবে এবার কয়েকটি বসতবাড়ি মাটি চাপা পড়লেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু হঠাৎ করে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকা থেকে এই পাহাড়ের নাম কেনো বাদ দেওয়া হয়েছে নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ৮ মে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৬ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভাতেও নগরী ও তার আশেপাশের ৩০টি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানানো হয়। পাশাপাশি এই পাহাড়গুলোর নাম সম্বলিত তালিকাও দেওয়া হয়। এই ৩০ টি পাহাড়ের মধ্যে ছিল জঙ্গল সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়ও। প্রায় দুই মাস পর ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৭ তম সভায় এসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের সংখ্যা ২৮টিতে নামিয়ে আনা হয়। তালিকায় বাদ পড়া দুটির মধ্যে একটি হলো এই জঙ্গল সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৭তম সভায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে জঙ্গল সলিমপুরের নাম বাদ দেওয়া হলেও এই পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করাদের বিষয়ে এতদিন না জানানোয় ক্ষোভ ঝাড়েন জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
সেই সভাতেই জঙ্গলবার সলিমপুরের দুর্গম এলাকায় সরকারি পাহাড় দখল ও কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলার বিষয়টি তুলে ধরেন নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া। এতদিন ধরে নজরে না আনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী তার ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম জেলায় যোগদান করেছি দুই মাস হয়ে গেল। কেনো আমাকে এতদিন জানানো হলো না এই বিষয়টি। কেনো এতদিন তাদের বাধা না দিয়ে সুযোগ করে দিলাম। কেনো আমরা যুদ্ধ করলাম না। ’
তবে ঝুঁকিপূর্ণ সেটা ‘বলা না হলেও’ উল্টো চারদিনের মধ্যে দুবার ধসের শিকার এই পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে সেখানে গুচ্ছগ্রাম করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের পুনর্বাসন করার কথা ভাবছিল জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে গৃহিত কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে ওই সভাতে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই জেলা প্রশাসক জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি পাহাড় দখল করে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তোলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায় গুচ্ছগ্রামের বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
তবে গত ২২ জুলাই পাহাড়ধসের পর জঙ্গল সলিমপুরে পরিদর্শন করার সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘ওই এলাকা থেকে বসতি স্থাপনকারীদের সরানো দরকার। ’
তিনি বলেন, ‘এসব পাহাড় বসবাসের উপযোগী নয়। কিন্তু মানুষ অবৈধভাবে ঘর তুলে তুলে পাহাড়ের চূড়ায় চলে গেছে। এখানে হাজার হাজার পরিবার, কিন্তু কোনো বৈধতা নেই। ’
তবে জঙ্গল সলিমপুরে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। তাই এ বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘জঙ্গল সলিমপুর থেকে কি আদৌ উচ্ছেদ করা যাবে। ’
কিন্তু এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হঠাৎ করে জঙ্গল সলিমপুরের নাম ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো কেনো?
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
টিএইচ/টিসি