ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চকরিয়া-পেকুয়ায় জনজীবনে বিপর্যয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
চকরিয়া-পেকুয়ায় জনজীবনে বিপর্যয় চকরিয়া-পেকুয়ায় জনজীবনে বিপর্যয়

কক্সবাজার: টানা ৬দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পক্ষকালের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া।

ঢলের তোড়ে ৫০টির বেশি বসতঘর নদীতে বিলীন ও পানির স্্েরাতে ধসে ও ভেসে গেছে। দু’উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের মধ্যে নদী তীরবর্তী ও নিকটবর্তী ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সমতল গ্রামের বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করায় অবর্ণনীয় দূর্ভোগের মুখে পড়েছে ২লক্ষাধিক মানুষ।

 
এসব পরিবারে রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে।

জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়কসহ বেশ ক’টি কাঁচা-পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় ছয় মাসিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে। সাগরে ভরা কটাল এবং ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিতে পারে বলে জনপ্রতিনিধিরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।  

প্রথম দফার বন্যায় উপজেলায় অল্প দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার বানের পানি বাড়তে থাকায় স্থানীয় লোকজন বলছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগটি ‘মরার উপর খরার ঘা’র’ হয়ে উঠেছে। মাতামহুুরী নদীতে বিপদ সীমার ১০২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। পানির স্্েরাত ও ধাক্কায় চকরিয়া পৌর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে, বাঁধের বিপরীতে বসবাস করা লোকজনকে অন্যত্র সরে যেতে সুবির্ধার্থে  প্রস্তুত থাকতে আহবান জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।  
এদিকে, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাহাবুবউল করিম সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন শিলখালী এলাকায় রয়েছি। শিলখালী ও উত্তর মেহেরনামার দুটি বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছি। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন উজানটিয়া, সদর, টৈটং, মগনামা, বারবাকিয়া, শিলখালীর বেশ কটি ওয়ার্ডে প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি।    
কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, ইউনিয়নের পালপাড়া, রুদ্রপাড়া, কসাইপাড়া, জেলেপাড়া, কর্মকার পাড়া, দক্ষিণ কাকারা, গারাপাড়া, চরপাড়া. পূর্বপাড়া, উত্তরপাড়ার ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা খাবার ও পানিজলের সংকটে ভুগছে। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দিচ্ছি। সংকটের কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
তিনি আরো বলেন, কাকারার প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাগুলো ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। মাঝেরপাড়ি, বেপারিপাড়া, প্রপার কাকারায় বাঁধ ও তীর ভেঙ্গে বসতি এলাকায় ঢলের পানি প্রবেশ করছে।    
সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, তার ইউনিয়নে ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।  
লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার বলেন, আমার এলাকায় অন্তত ২ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।
কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোছেন বলেন, এই ইউনিয়নে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার তার ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানান। হারবাং ইউনিয়নে ৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি বলে ইউপি চেয়ারম্যান মো.মিরানুল ইসলাম জানান। সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল তার ইউনিয়নের ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানান।  
চিরিংগা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের ১, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ৮হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।  
পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান মো.আনোয়ারুল আরিফ দুলাল বলেন, আমার এলাকায় অন্তত ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি।   
চকরিয়া পৌরসভার সচিব মাসউদ মোর্শেদ বলেন, পৌরসভার দিগরপানখালীস্থ শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করতে ছুটে এসেছেন মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম, ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, পাউবোর কর্মকর্তা, কাউন্সিলর ও বেশ ক’জন ইউপি সদস্য।  
সবিচ আরো বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনে বন্যা সমস্যা নিয়ে প্রাথমিক হিসেব দিয়েছি। তাতে বলেছি পৌরসভার ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বারি পাড়ায় ১৫টি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই ওয়ার্ড ছাড়াও ৩ ও ৫নং ওয়ার্ডে আরো ২০টি কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।     
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, আমি এখন পৌরশহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় রয়েছি। বন্যা কবলিত বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি বিকেল পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিতে পারে। তাই জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের বন্যা কবলিত এলাকা নজরদারীতে রাখতে বলা হয়েছে।  
তিনি আরো বলেন, যেসব পাড়া-গাঁয়ে অত্যাধিক পানি উঠেছে সেসব এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি ছাড়াও এলাকার লোকজনকে নির্দেশনা দিয়েছি জরুরী সমস্যা দেখা দেওয়া মাত্র আমাকে জানাতে। আমি যেসব এলাকায় অধিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানেই তাৎক্ষণিক গিয়ে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করছি বন্যায় চকরিয়ার মানুষকে অসহায় অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়ঃ ২০৪৫ ঘন্টা, জুলাই ২৫,২০১৭

টিটি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।